প্রযুক্তি

ঢাকায় শুরু হলো দুই দিনের হালকা প্রকৌশল মেলা: দেশীয় শিল্পের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন

ঢাকায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী হালকা প্রকৌশল মেলা। দেশীয় হালকা প্রকৌশল খাতের পণ্য, সেবা ও প্রযুক্তির প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখতে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বিইআইওএ) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (ইসি৪জে) প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে মেলাটি আয়োজন করা হয়েছে। এবারের মেলায় মোট ২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইসি৪জে প্রকল্পের পরিচালক মো. আবদুর রহিম খান, এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হুসনা ফেরদৌস। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ভিয়েতনামের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ হালকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আসে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি চিত্র তার বিপরীত। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় হালকা প্রকৌশল শিল্প খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আবদুর রশিদ, সহসভাপতি রাজু আহমেদ প্রমুখ।

হালকা প্রকৌশল খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশে হালকা প্রকৌশল খাতের বার্ষিক আয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ শতাংশ। এই খাতে প্রায় ৪০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ সক্রিয় রয়েছে, যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ কর্মরত। এগুলো থেকে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, যা দেশের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করে।

বিশ্বব্যাপী হালকা প্রকৌশল পণ্যের বাজার প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ১ শতাংশেরও কম। তবে সঠিক নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা পেলে এই খাতটি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি প্রধান উৎস হতে পারে। +

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

হালকা প্রকৌশল খাতের উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন:

  • কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্ক: কাঁচামাল আমদানিতে অনেক শুল্ক আরোপ করা হয়, যা উৎপাদন খরচ বাড়ায়।
  • প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব: দক্ষ শ্রমিকের অভাবে পণ্যের মান বজায় রাখা কঠিন হয়।
  • আধুনিক প্রযুক্তির অভাব: আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির অভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়া পিছিয়ে রয়েছে।
  • নীতিগত সহায়তার অভাব: সরকারি নীতিতে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, যা খাতটির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।

এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রস্তাবিত করণীয়গুলো হলো:

  • কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস: উৎপাদন খরচ কমাতে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো প্রয়োজন।
  • প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: দক্ষ শ্রমিক গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা উচিত।
  • আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন: উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করতে হবে।
  • নীতিগত সহায়তা প্রদান: সরকারি নীতিতে সমন্বয় এনে খাতটির বিকাশে সহায়তা করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা

হালকা প্রকৌশল খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উন্নয়ন ও ই-ওয়েস্ট প্রক্রিয়াকরণের সুবিধাদি সৃষ্টি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়ন কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও সাভার চামড়া গবেষণা কেন্দ্রে ম্যাটেরিয়ালস কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

এছাড়া, উদ্যোক্তারা পৃথক শিল্পপার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা সহজে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, এই দাবি বিবেচনা করা হবে।

হালকা প্রকৌশল খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই খাতের উন্নয়নে সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সঠিক নীতি সহায়তা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সংযোজন এবং পৃথক শিল্পপার্ক স্থাপনের মাধ্যমে এই খাতকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button