করোনায় ভারতে একদিনে মারা গেল দুজন, আক্রান্ত ৪ হাজার

ভারতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬০ জন, যা নিয়ে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০-এ। একই সময়ে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২ জন। মহামারি-পরবর্তী সময়ে যখন জীবন স্বাভাবিক হওয়ার পথে, তখন এই হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তিত হলেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্ক নয়, বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সংক্রমণ বাড়লেও এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বর্তমানে যেসব আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশের উপসর্গ তুলনামূলকভাবে মৃদু এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। পাশাপাশি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) মহাপরিচালক ড. রাজীব বাহল বলেন, “করোনার এই নতুন ধরণ নিয়ে জনসাধারণের উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। আমাদের কেবল সতর্ক থাকতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এখনই কোনো অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন নেই, তবে কিছু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ক্যান্সার বা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তিরা, তাদের জন্য যেকোনো ধরনের সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা যেন আরও সচেতন থাকেন।”
রাজ্যভিত্তিক সংক্রমণের চিত্র
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শুধুমাত্র এই রাজ্যেই নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন। কেরালার পরই তালিকায় রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪৮৫ জন।
এছাড়া কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, দিল্লি এবং গুজরাটেও ছড়িয়ে পড়ছে এই নতুন ধরণের সংক্রমণ। তবে দেশব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা এখনও তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
লক্ষণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হলেও সতর্কতা জরুরি
ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, কোভিডের আগের ধাপগুলোর মতোই এবারও রোগীদের মধ্যে কিছু চেনা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—একটানা শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমিভাব, চোখ লাল হয়ে যাওয়া (কনজাংটিভাইটিস) এবং কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি।
তবে অধিকাংশ রোগীই বাড়িতে বিশ্রাম ও সাধারণ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠছেন। শুধু যেসব রোগীর বয়স বেশি অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।
নতুন ধরন কি চিন্তার কারণ?
বর্তমানে ভারতে যে করোনা ধরনটি ছড়িয়ে পড়ছে, সেটি অনেকটাই সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো উপসর্গ তৈরি করছে। যদিও এই ধরনটির জিনগত রূপান্তর বা মিউটেশন নিয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি, তবে আইসিএমআর বলছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের স্বাভাবিক রূপান্তরের ধারাতেই এ ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। তবে তা গুরুতর অবস্থায় না পৌঁছালে সার্বিক উদ্বেগের কিছু নেই।
টিকাদান এবং বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানিয়েছে, সংক্রমণ ঠেকাতে এবং জটিলতা কমাতে টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা ইতোমধ্যে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাঁদের বুস্টার ডোজ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যারা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে পড়েন—তাঁদের জন্য বুস্টার ডোজ বাধ্যতামূলক বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ভাইরাস সংক্রমণের রূপ যাই হোক, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হলো টিকা। টিকা নেওয়ার ফলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে না।”
স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর গুরুত্ব
করোনার নতুন এই ঢেউ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আইসিএমআরের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থতা অনুভব করলে ঘরে অবস্থান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনো অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা গণপরিবহন এখনো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আংশিক বিধিনিষেধ আরোপের কথাও বিবেচনা করা হতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রস্তুত, তবে জনসচেতনতা অপরিহার্য
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারাদেশে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। অক্সিজেন, ওষুধ এবং আইসিইউ শয্যা সহ পর্যাপ্ত সরঞ্জাম মজুত আছে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ না বাড়াতে জনগণকে নিজেদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ এখন অনেক বেশি প্রস্তুত। তবে ব্যক্তিগত সচেতনতা ছাড়া মহামারি মোকাবিলা সম্ভব নয় বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
উপসংহার
ভারতে ফের করোনা সংক্রমণ বাড়ার খবরে উদ্বেগ দেখা দিলেও, সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংক্রমণের ধরন মৃদু, মৃত্যু হারও কম। তবে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে হলে এখন থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। যেসব নাগরিক এখনো টিকা গ্রহণ করেননি বা বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের দ্রুত টিকাদানের আওতায় আসতে হবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ ধাপটিও আগের মতো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।