ক্রিকেট

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় নাসুমের ছক্কায় আবাহনীর বিপক্ষে ‘ফাইনালে’ মোহামেডান

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগে জমে উঠেছে শিরোপার লড়াই। বিকেএসপিতে নিজেদের ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে হারিয়ে আবাহনী লিমিটেড অপেক্ষা করছিল মিরপুর শেরেবাংলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচের ফলাফলের দিকে। মোহামেডান যদি হেরে যেত, তাহলে আজই শিরোপা উৎসবে মাততে পারত আবাহনী। তবে শেষ ওভারের রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় মোহামেডান জয় ছিনিয়ে নিয়ে সেই পরিকল্পনায় বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সুপার লিগের শেষ রাউন্ডের মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ হয়ে উঠেছে অঘোষিত ‘ফাইনাল’।

নাটকীয় শেষ ওভার: নাসুমের ছক্কার মাহাত্ম্য

মোহামেডান ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের মধ্যকার ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে মোহামেডানের জন্য জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না। ২৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। গাজী গ্রুপের পক্ষে পারভেজ ইমন বল করতে এলে মোহামেডানের দুই ব্যাটসম্যান সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ দৃঢ় মনোবলে ক্রিজে দাঁড়িয়ে যান।

প্রথম চার বলে মাত্র ৫ রান তুলতে সক্ষম হয় মোহামেডান। তখন প্রয়োজন পড়ে ২ বলে ৭ রানের। ঠিক সেই মুহূর্তে পারভেজ ইমনের পঞ্চম বলটি তুলে মারেন নাসুম আহমেদ—গগনচুম্বী এক ছক্কা! ম্যাচ দাঁড়িয়ে যায় একেবারে সমতায়। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১ রান, সেটিও অনায়াসে তুলে নেয় মোহামেডান। মাঠ ছেড়ে আসে দুর্দান্ত এক জয়ের আনন্দ নিয়ে।

মোহামেডানের বোলিং নায়করা: সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজ

টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামা গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৪৯.৪ ওভারে ২৩৬ রানেই গুটিয়ে যায়। ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন, ৮০ রানের ইনিংস খেলে। তবে অন্য প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। মোহামেডানের হয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজুর রহমান সমান ৩টি করে উইকেট নেন। সাইফউদ্দিন ৯.৪ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন, অন্যদিকে মোস্তাফিজ ১০ ওভারে দেন ৪৬ রান। তাদের দুর্দান্ত বোলিংয়েই গাজী গ্রুপকে স্বল্প রানে আটকে রাখা সম্ভব হয়।

টপ অর্ডারের জুটি ও মিডল অর্ডারের বিপর্যয়

রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই মোহামেডান হারায় ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমনকে। তবে আরেক ওপেনার রনি তালুকদার এবং তাওহিদ হৃদয়ের ৭৫ রানের জুটি দলের ভিত গড়ে দেয়। রনি তালুকদার আউট হন ৫৭ বলে ৪৫ রান করে।

এরপর তাওহিদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস সাজাতে থাকেন। কিন্তু হৃদয় ৩৭ রান করে এবং মাহমুদউল্লাহ ৪৯ রানে ফিরে গেলে আবারও চাপ সৃষ্টি হয় মোহামেডানের ওপর। ম্যাচ তখন চলে যায় সমতায়।

সেখান থেকে শেষ মুহূর্তের দায়িত্ব নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন সাইফউদ্দিন (৩০* রান) ও নাসুম আহমেদ (২১* রান)। তাদের ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ের কারণেই মোহামেডান নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ দুই পয়েন্ট এবং সুপার লিগের শেষ রাউন্ডে ফাইনালের উত্তেজনা।

সুপার লিগের হিসাব: অঘোষিত ফাইনাল

এই জয়ে সুপার লিগের শেষ রাউন্ডে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হয়ে উঠেছে শিরোপা নির্ধারণী। সেই ম্যাচে যে দল জিতবে, তারাই হবে ২০২৫ সালের ডিপিএল চ্যাম্পিয়ন।

  • যদি মোহামেডান জয়ী হয়, দুই দলের পয়েন্ট সমান হবে, কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় শিরোপা যাবে মোহামেডানের ঝুলিতে।
  • আর ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে বা ড্র হলে আবাহনীই হবে চ্যাম্পিয়ন।

এমন উত্তেজনাপূর্ণ সমীকরণ ডিপিএলের শেষ রাউন্ডের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২৩৬ রান, ৪৯.৪ ওভার (মুনিম শাহরিয়ার ৮০, সাইফউদ্দিন ৩/৪২, মোস্তাফিজ ৩/৪৬)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ২৩৭/৬, ৫০ ওভার (রনি তালুকদার ৪৫, সাইফউদ্দিন ৩০*, নাসুম আহমেদ ২১*)

সেরা পারফর্মার

  • ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ (শেষ ওভারের ছক্কা ও ম্যাচ জেতানো অবদান)
  • সেরা বোলার: মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন

ডিপিএলের এবারের আসরে আবাহনী এবং মোহামেডানের লড়াই শুরু থেকেই ছিল জমজমাট। কিন্তু সুপার লিগের শেষদিকে এসে যেভাবে মোহামেডান নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে নাটকীয় জয় ছিনিয়ে আনল, তা নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন অপেক্ষা ২৯ এপ্রিলের, যেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হবে শিরোপার জন্য।

কে হাসবে শেষ হাসি—মোহামেডান না আবাহনী? উত্তরের জন্য চোখ রাখতেই হবে মিরপুর শেরেবাংলায় সেই মহারণে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button