বানিজ্য

আজকের স্বর্ণের দাম: ১৩ আগস্ট ২০২৫

গান্তরের রিপোর্ট: আজকের স্বর্ণের বাজার পরিস্থিতি

১৩ আগস্ট ২০২৫, বুধবার, দেশের স্বর্ণের বাজারে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক সর্বশেষ সমন্বিত দাম অনুযায়ী আজ দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি ভরি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

দেশের স্বর্ণ বাজারে আজকের দাম

বাজুসের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আজকের বাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নরূপ —

ক্যারেটপ্রতি ভরি দাম (টাকা)
২২ ক্যারেট১,৭১,৬০১
২১ ক্যারেট১,৬৩,৭৯৮
১৮ ক্যারেট১,৪০,৪০০
সনাতন পদ্ধতি১,১৬,১২৭

এছাড়া রুপার দামও অপরিবর্তিত রয়েছে, যেখানে ২২ ক্যারেটের রুপা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ভরি ২,৮১১ টাকায়।

স্বর্ণের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) প্রতি সপ্তাহে বা প্রয়োজনীয় সময় স্বর্ণের দাম সমন্বয় করে থাকে। এই মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের স্বর্ণের দাম, ডলার বিনিময় হার, দেশীয় বাজারের চাহিদা ও সরবরাহ বিবেচনায় নেওয়া হয়।

স্বর্ণ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণের সঙ্গে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৫% ভ্যাট এবং বাজুসের ন্যূনতম ৬% মজুরি যুক্ত হয়। তবে গহনার ডিজাইন, ওজন ও মান অনুসারে মজুরি কিছুটা ওঠানামা করতে পারে।

গতকালের থেকে স্বর্ণের দাম: সাম্প্রতিক পরিবর্তন

গত ২৩ জুলাই বাজুস স্বর্ণের দামে সাময়িক সমন্বয় করে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩ আগস্ট ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২১ ক্যারেট ও ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের দামও সামান্য কমানো হয়েছে।

স্বর্ণের দামের এই ওঠানামা সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারের স্বর্ণের মূল্যের পরিবর্তন এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী ঘটে থাকে।

সোনার দাম এবং বাংলাদেশের বাজার পরিস্থিতি: বিস্তারিত বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম প্রভাবিত হয় বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের আন্তর্জাতিক মূল্য, ডলার মুদ্রার বিনিময় হার, এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে। দেশে যখন ডলারের মান বৃদ্ধি পায়, তখন স্বর্ণের দাম সাধারণত বাড়ে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমলে, দেশের বাজারেও প্রভাব পড়ে।

২০২৫ সালের এই সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন জিও-পলিটিক্যাল ইস্যুতে স্বর্ণের দাম অনেকটা স্থিতিশীল হলেও মাঝে মাঝে ওঠানামা করেই চলছে। স্বর্ণকে সাধারণত নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ধরা হয়, তাই বিনিয়োগকারীরা নানা কারণে স্বর্ণের প্রতি আগ্রহী থাকেন।

স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণসমূহ

১. আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি: যেমন যখন বিশ্বের বড় অর্থনীতিগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ স্থান খোঁজে, ফলে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায় এবং দাম বাড়ে।

২. ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি: ডলারের বিনিময় হার বাড়লে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে।

৩. দেশীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাধারণ মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ খোঁজে, ফলে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে দাম বাড়ে।

স্বর্ণের দাম কমার কারণসমূহ

১. আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম পতন: বিশ্ব অর্থনীতিতে উন্নতি হলে স্বর্ণের চাহিদা কমে যেতে পারে, যা দাম কমার কারণ হতে পারে।

২. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসা: অর্থনীতির স্থিতিশীলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নেওয়া সহজ মনে করলে স্বর্ণের চাহিদা কমতে পারে।

৩. সরকারের নীতিমালা: মূল্য নির্ধারণে সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ দাম কমিয়ে দিতে পারে।

২০২৫ সালের স্বর্ণের বাজার ট্রেন্ড: ২০২৪ সালের তুলনায়

২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে দেশের বাজারে মোট ৪৫ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে ২৯ বার এবং কমানো হয়েছে ১৬ বার। গত বছর ২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম মোট ৬২ বার সমন্বয় করা হয়েছিল, যার মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছিল ৩৫ বার এবং কমানো হয়েছিল ২৭ বার।

এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, স্বর্ণের বাজারে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে।

সোনায় বিনিয়োগ: কেন এবং কিভাবে?

স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ এবং বাজারের ওঠাপড়া বুঝে ক্রয়-বিক্রয় করাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বিশেষ করে বিবাহ, উৎসব ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বর্ণের চাহিদা প্রচুর।

বিনিয়োগের পরামর্শ:

  • বাজার পর্যবেক্ষণ করে দাম ওঠার আগে ক্রয় করা উচিত।
  • স্বর্ণের দাম কমার সময় বিক্রি করে লাভবান হওয়া সম্ভব।
  • সরকারি ও বাজুসের নির্ধারিত দামের খবর নিয়মিত রাখা জরুরি।

রূপার বাজার পরিস্থিতি

স্বর্ণের পাশাপাশি দেশের বাজারে রূপার দামও গুরুত্বপূর্ণ। আজ ২২ ক্যারেট রুপা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ভরি ২,৮১১ টাকায়। রুপার দাম বেশ কয়েক মাস ধরে তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন কারখানায় রুপা ব্যবহৃত হয় গহনা তৈরি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, ও অন্যান্য শিল্পে।

স্বর্ণের ভবিষ্যৎ মূল্য নির্ধারণের সম্ভাবনা

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার ওপর নির্ভর করে স্বর্ণের ভবিষ্যৎ দাম ওঠানামা করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত থাকে, তবে স্বর্ণের মূল্য আগামী বছরেও ধরে রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা, ডলারের স্থিতিশীলতা এবং সরকারী নীতিমালা এই দামে প্রভাব ফেলবে।

বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। আজ ১৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও আগামি দিনগুলোতে বিশ্ববাজারের ওঠানামার ওপর নির্ভর করে দাম পরিবর্তিত হতে পারে। স্বর্ণের বাজারে বিনিয়োগ ও কেনাবেচা করার আগে নিয়মিত বাজার খোঁজ নেওয়া জরুরি।

MAH – 12292 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button