মুনাফা বেড়েছে আইপিডিসি ফিন্যান্সের, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০% লভ্যাংশ ঘোষণা

২০২৪ অর্থবছরে আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেড মুনাফা করেছে প্রায় ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম এই কোম্পানিটি মুনাফা বৃদ্ধির ধারায় ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত বছরের চেয়ে মুনাফা বেশি, তবে এখনো ২০২২-এর নিচে
২০২৩ সালে আইপিডিসি’র নিট মুনাফা ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকায়। যদিও এটা ২০২২ সালের মুনাফা—৯০ কোটি টাকার তুলনায় অনেক কম, তবে ২০২৩ সালের বড় ধসের পর এটি একটি ইতিবাচক মোড় বলে বিবেচিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে যেখানে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি, ২০২৩ সালে সেখানে ৬১ শতাংশ কমে মুনাফা দাঁড়ায় মাত্র ৩৪ কোটিতে। সেই তুলনায় চলতি বছর প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১০ শতাংশ লভ্যাংশ: ৫% নগদ, ৫% বোনাস
আইপিডিসি ফিন্যান্স তাদের ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে:
- ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ
- ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ
এই হারে লভ্যাংশ ২০২৩ সালেও ছিল অপরিবর্তিত। ফলে আইপিডিসি ধারাবাহিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের নির্ভরযোগ্য রিটার্ন দিয়ে যাচ্ছে।
লভ্যাংশ ঘোষণায় শেয়ারের দাম বেড়েছে
আইপিডিসির মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণার খবর প্রকাশের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে যায়।
- আজ বৃহস্পতিবার লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টায় কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ টাকা ১০ পয়সায়,
যা আগের দিনের তুলনায় ৬০ পয়সা বা প্রায় ৩.৬৫ শতাংশ বেশি। - এ সময় লেনদেন হয়েছে প্রায় ৯ লাখ শেয়ার, যার মোট বাজারমূল্য ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার মতো।
রেকর্ড তারিখ ও এজিএম
ঘোষিত লভ্যাংশ কারা পাবেন, তা নির্ধারণে কোম্পানিটি আগামী ৮ মে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করেছে।
- ওই দিন যাদের নামে আইপিডিসির শেয়ার থাকবে, তারা এই লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
- ওই দিন শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ থাকবে।
- লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে বার্ষিক সাধারণ সভায় (AGM) অনুমোদনের পর।
- এজিএম অনুষ্ঠিত হবে ২ জুন।
মুনাফা বাড়লেও এখনো আগের জায়গায় ফিরেনি
আইপিডিসির মুনাফা বৃদ্ধির খবর ইতিবাচক হলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন কোম্পানিটি এখনো ২০২২ সালের অবস্থানে ফিরে আসেনি।
২০১৯ থেকে ২০২৪—এই ছয় বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছিল ২০২২ সালে, যা ছিল ৯০ কোটিরও বেশি। এরপর বড় ধসের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
২০২৩ সালে মুনাফা কমে গেলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। তবে ২০২৪ সালের মুনাফা বৃদ্ধির ফলে আবারও আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বাজারে।
মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করতেই বোনাস লভ্যাংশ
কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূলধন ভিত্তি আরও শক্তিশালী করতে এবং ভবিষ্যতের টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতেই এবারও বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে:
- ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে
- ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক হবে
- বাজারে আইপিডিসির অবস্থান আরও সুসংহত করবে
শেয়ারবাজারে আইপিডিসির স্থিতিশীলতা
শেয়ারবাজারে আইপিডিসি একটি সুপরিচিত এবং স্থিতিশীল প্রতিষ্ঠান।
- বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি মাঝারি ঝুঁকির আর্থিক খাতভুক্ত শেয়ার,
- যা নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে,
- এবং দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মুনাফা বাড়া ও একই হারে লভ্যাংশ ধরে রাখা প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস মডেল ও ব্যাবস্থাপনা দক্ষতার ইঙ্গিত দেয়।
আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেড ২০২৪ সালে মুনাফা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আবারও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করছে।
১০ শতাংশ লভ্যাংশ, শেয়ারের দরবৃদ্ধি এবং মূলধন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ মিলিয়ে বলা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
তবে এখনো ২০২২ সালের সর্বোচ্চ মুনাফা থেকে অনেকটা দূরে রয়েছে।
ভবিষ্যতের বাজার পরিস্থিতি, সুদহার, ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দক্ষতা এই প্রতিষ্ঠানটির সামনের অগ্রগতিকে নির্ধারণ করবে।