কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সম্মেলন শুরু, সমাধান খুঁজতে একজোট বিশ্ব

সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশের কক্সবাজারে শুরু হলো তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনে বিশ্বের ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ক্যাম্পে উদ্ভূত মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
সম্মেলনের স্থান ও সময়
সম্মেলনটি কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকায় অবস্থিত হোটেল বে-ওয়াচের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে ২৪ আগস্ট, ২০২৫, বিকেল ৪টায়। পরবর্তী অধিবেশনগুলো ২৫ আগস্ট, ২৬ আগস্ট এবং ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গ
সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে আসবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনের আয়োজক ও সহযোগী সংস্থা
সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রোহিঙ্গা ইস্যু বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর। সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশন পরিচালনা করছেন আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়সমূহ
সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়গুলো হলো:
- রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা
- শরণার্থী ক্যাম্পে মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ
- রাখাইনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব
- রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের উপায়
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তহবিল সংগ্রহ
রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন, যাদের অধিকাংশই কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন। এই শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশসমূহ এই সংকটের সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন প্রদান করছে। তবে, সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের অবস্থান ও উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সমন্বয়
- রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সাথে আলোচনা
সম্মেলনের গুরুত্ব
এই সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং শরণার্থী ক্যাম্পে মানবিক সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সম্মেলনের পর, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো উপস্থাপন করা হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদার হবে।
রোহিঙ্গা সংকট একটি মানবিক ইস্যু, যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং শরণার্থী ক্যাম্পে মানবিক সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।
MAH – 12474 , Signalbd.com