বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪০৮

সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনেই নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিনেই ৩ মৃত্যু ও ৪০৮ জন ভর্তি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। তাদের বয়স যথাক্রমে ৫৩, ২২ ও ১৮ বছর। মৃত্যুর ঘটনাগুলো মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাসপাতালেই ঘটেছে।

একই সময়ের মধ্যে সারাদেশে ৪০৮ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন এবং বাকিরা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হন।

ডেঙ্গুর বিস্তার: কোন বিভাগে কতজন ভর্তি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সর্বশেষ ভর্তি হওয়া ৪০৮ জন রোগীর মধ্যে বিভাজন নিম্নরূপ:

  • বরিশাল বিভাগ: ৭৩ জন
  • ঢাকা বিভাগ (ঢাকা মহানগর ব্যতীত): ৫৯ জন
  • চট্টগ্রাম বিভাগ: ৫৮ জন
  • রাজশাহী বিভাগ: ৫২ জন
  • খুলনা বিভাগ: ৩৭ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগ: ২৫ জন
  • রংপুর বিভাগ: ৭ জন
  • সিলেট বিভাগ: ৩ জন

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

চলতি বছরের চিত্র: আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান

২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৩,২২০ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ, যা এক মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

মৃত্যুর দিক থেকেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখন পর্যন্ত ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৫ জন পুরুষ এবং ৪০ জন নারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই উপসর্গকে গুরুত্ব না দেওয়ায় সময়মতো চিকিৎসা নিচ্ছেন না, ফলে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।

কেন বাড়ছে ডেঙ্গু?

স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়াই ডেঙ্গুর বিস্তারের মূল কারণ। বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান ও সচেতনতা কার্যক্রম অনেক জায়গায় ছিল অকার্যকর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জানান, “ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে। অনেকেই মনে করেন সাধারণ জ্বর, কিন্তু এটি জীবনঘাতী হতে পারে।”

প্রতিক্রিয়া ও সতর্কবার্তা

সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিশেষ ডেঙ্গু ইউনিট চালু রাখা হয়েছে এবং মশা নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সিটি করপোরেশনগুলো এলাকাভিত্তিক অভিযান জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে—বিশেষ করে ঘরের আশপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ ও মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

অতীতের তুলনায় চলতি বছরের পরিস্থিতি

২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং মশা নিধনের ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, শুধু প্রতিকারের দিকে না তাকিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

সারসংক্ষেপ  

ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং একটি জাতীয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, মৃত্যু হচ্ছে নিয়মিত। এখনই যদি সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, জনসচেতনতা বাড়ানো, দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এই সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব।

এম আর এম – ০৭৩৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button