বিশ্ব

গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে অভুক্ত, বলছে জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ কয়েকদিন ধরে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। অবরোধ, ধ্বংসযজ্ঞ ও সীমিত সহায়তার কারণে সেখানে অনাহার ও অপুষ্টির প্রকোপ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে।

জাতিসংঘের রিপোর্টে ভয়াবহ চিত্র

ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রায় ৯০ হাজার নারী ও শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই খাদ্য সংকটজনিত কারণে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে ১২২ জন।

সংস্থাটি বলছে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করলেও পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। সহায়তার অভাবে অনেক পরিবার দুই-তিন দিন না খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

সরবরাহ ও সাহায্যের পথে বাধা

গাজার সীমান্তপথ ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা মানবিক সহায়তা প্রবেশে কোনো বাধা দিচ্ছে না। বরং তারা হামাসকে দায়ী করছে যে সহায়তার যথাযথ বন্টন করছে না। যদিও মানবিক সংগঠনগুলো বলছে, বাস্তবে সাহায্যের সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত এবং এতে সংকট সমাধান হচ্ছে না।

কিছু দেশের পক্ষ থেকে আকাশপথে খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান এই উদ্যোগে অংশ নিতে চাইলেও এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি মেলেনি বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া

গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে অবিলম্বে সব ধরনের বাধা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এক ভাষণে বলেছেন, “গাজার মানুষ যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অকল্পনীয়। এই বিপর্যয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষ্ক্রিয়তা এবং মানবিকতার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”

খাদ্য সংকটের পেছনে যুদ্ধ ও অবরোধ

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে সেখানে ক্রমাগত অবরোধ, বোমাবর্ষণ ও সংঘর্ষ চলছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের।

অবরোধের কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি চরম আকার নিয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছুটা শিথিলতা আনা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য।

মানবিক বিপর্যয়ের শিকার সাধারণ মানুষ

গাজার সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্ভোগ এখন চরমে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খাবারের সন্ধানে আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং রাস্তায় দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনাহার ও অপুষ্টির কারণে প্রতিদিনই নতুন করে কেউ না কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিদিন এমন পরিবার দেখছি যারা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় খাবার পায় না। শিশুরা কেবল এক টুকরো রুটি বা কিছু পানি নিয়ে বেঁচে আছে।”

সমাধানের জন্য বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান

জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার গাজায় অবিলম্বে পূর্ণমাত্রার সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে গাজায় দুর্ভিক্ষ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা মনে করছে, যুদ্ধবিরতি ও নিরাপদ সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া এই সংকট থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, গাজার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অপুষ্টির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।

সারসংক্ষেপ  

গাজার মানবিক বিপর্যয় দিনে দিনে আরও গভীর হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সর্বশেষ রিপোর্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে গাজায় সাহায্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে এবং নিরপরাধ মানুষের এই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে পারবে কি না।

এম আর এম – ০৫২৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button