এআই অবকাঠামোর খরচ সামলাতে ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ

বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে একবারে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে মেটা (Meta)। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তির দ্রুত বর্ধমান চাহিদার কারণে বিশাল পরিমাণ অবকাঠামো গড়ে তুলতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এ জন্য মেটা এবার ২০০ কোটি ডলারের (প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার) ডেটা সেন্টার সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে মেটা জানায়, এই সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে তারা বাইরের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। এ ভাবেই প্রতিষ্ঠানটি নিজের খরচের বোঝা কিছুটা হ্রাস করবে এবং একসঙ্গে আরও বড় অবকাঠামো গড়ার সক্ষমতা অর্জন করবে।
মেটার বড় পরিবর্তন: নিজস্ব অর্থায়ন থেকে অংশীদারিত্বের পথে
অতীতের প্রযুক্তি জায়ান্টরা সাধারণত নিজেদের সম্পদ ও অর্থের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ করতো। তবে মেটার এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এআই প্রযুক্তির জন্য অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার নির্মাণে বহুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় তারা এখন বাইরের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
মেটার চিফ ফিন্যান্স অফিসার (CFO) সুসান লি এক কনফারেন্স কলে বলেন,
“আমরা আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে ডেটা সেন্টার নির্মাণের পথ অনুসন্ধান করছি। যদিও বেশিরভাগ ব্যয় মেটা নিজেই বহন করবে, তবে কিছু প্রকল্পে বাইরের বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।”
তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। তবে কোম্পানির ত্রৈমাসিক নথি থেকে বোঝা যায়, বিক্রির পরিকল্পনাগুলো অনেকটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
২০০ কোটি ডলারের সম্পদের মধ্যে কী রয়েছে?
মেটা ২০৪ কোটি ডলারের জমি ও নির্মাণাধীন ভবনের ‘হেল্ড-ফর-সেল’ ক্যাটাগরিতে সম্পদগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে। অর্থাৎ, এই সম্পদগুলো ভবিষ্যতে বিক্রির জন্য সংরক্ষিত।
আগামী ১২ মাসের মধ্যে এসব সম্পদ তৃতীয় পক্ষকে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অংশীদাররা মেটার সঙ্গে যৌথভাবে ডেটা সেন্টার নির্মাণ ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবে।
এই পুনঃশ্রেণীকরণ থেকে মেটার কোনো আর্থিক লোকসান হয়নি। সম্পদগুলো তাদের বহনযোগ্য মূল্য বা বিক্রয়মূল্য অনুসারে হিসাব করা হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত মেটার ‘হেল্ড-ফর-সেল’ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২৬ বিলিয়ন ডলার।
মার্ক জাকারবার্গের দৃষ্টিভঙ্গি: ভবিষ্যতের ‘সুপারক্লাস্টার’ ডেটা সেন্টার
মেটার প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেন,
“আমরা ভবিষ্যতে এআই-ভিত্তিক সুপারইন্টেলিজেন্স তৈরির জন্য ‘সুপারক্লাস্টার’ নামক ডেটা সেন্টার নির্মাণে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবো।”
তিনি আরও জানান,
“আমাদের একটি ডেটা সেন্টারের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন শহরের বড় একটি অংশের সমান।”
এমন বিশাল আকারের অবকাঠামো নির্মাণে অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট।
আর্থিক উন্নতি এবং বিজ্ঞাপন আয়ের ইতিবাচক দিক
গত বুধবার মেটা তাদের বার্ষিক মূলধন ব্যয়ের পূর্বাভাসের নিম্নসীমা ২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে ৬৬ থেকে ৭২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় কোম্পানি ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বড় বাজেট বরাদ্দ করবে।
আরও উল্লেখযোগ্য, মেটার বিজ্ঞাপন বিক্রিতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল এসেছে। এআই-নির্ভর বিজ্ঞাপন লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কনটেন্ট ডেলিভারির উন্নতির জন্য এই বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। ফলে কোম্পানির আয় বৃদ্ধি পেয়ে এআই অবকাঠামোর জন্য অতিরিক্ত খরচ সামলানো কিছুটা সহজ হবে।
মেটার এআই বিনিয়োগ: গেমচেঞ্জার হতে পারে ‘সুপারক্লাস্টার’
মেটার ‘সুপারক্লাস্টার’ প্রকল্পটি এক ধরনের পরবর্তী প্রজন্মের ডেটা সেন্টার হবে, যেখানে উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটিং এবং এআই গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকবে। এটি শুধু মেটার প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেবে না, বরং গ্লোবাল প্রযুক্তি বাজারে এআই-ভিত্তিক পরিষেবাগুলোর ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।
এই ডেটা সেন্টারগুলো কেবলমাত্র তথ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করবে না, বরং জেনারেটিভ এআই, মেশিন লার্নিং, এবং অন্যান্য অগ্রগামী প্রযুক্তির জন্য বিশাল পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তি সরবরাহ করবে।
প্রযুক্তি শিল্পে অংশীদারিত্ব ও বিনিয়োগের নতুন ধারা
মেটার এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি শিল্পে একটি নতুন প্রবণতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে যেখানে কোম্পানিগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার করার পাশাপাশি বাইরের বিনিয়োগকারীদের অংশীদার করে উন্নত অবকাঠামো নির্মাণ করছে।
এর ফলে, বিনিয়োগকারীদের জন্য এআই ও ডেটা সেন্টার শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মেটা ও এর অংশীদাররা প্রযুক্তি উন্নয়নে আরো দ্রুতগতিতে এগোতে পারবে।
সার্বিক প্রভাব: বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রযুক্তির প্রভাব
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ ধরনের প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যখন এআই ও ক্লাউড অবকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে, তখন সেখান থেকে উদ্ভূত প্রযুক্তি ও সেবা স্থানীয় বাজারেও পৌঁছানো সহজ হয়।
বাংলাদেশের আইটি ও টেলিযোগাযোগ খাতও এ ধরণের গ্লোবাল প্রবণতাকে অনুসরণ করে দ্রুত উন্নয়নের সুযোগ পাবে। মেটার মতো প্রতিষ্ঠান যখন নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণে অংশীদারিত্ব নেয়, তখন উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ ও বাণিজ্যিক সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
মেটার ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ বিক্রি ও বাইরের অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এআই অবকাঠামোর ভবিষ্যত গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে। এটি প্রযুক্তি দুনিয়ায় নতুন বিনিয়োগের দরজা খুলে দিচ্ছে, যেখানে বড় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব খরচ কমানো এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিস্তৃত অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে।
এই পরিবর্তন শুধু মেটার জন্য নয়, পুরো প্রযুক্তি খাতের জন্যই একটি নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের প্রযুক্তিপ্রেমী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য এ খবর অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক।
MAH – 12082 , Signalbd.com