বেতন না পেয়ে কলেজের খেলার মাঠ চাষের জন্য লিজ দিলেন অধ্যক্ষ!

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মনতৈল এলাকার অ্যাডভোকেট আবু জাহির মডেল কলেজে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ঘটনা। দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ লিজ দিয়েছেন। বর্তমানে মাঠে ধান চাষের প্রস্তুতি চলছে, যা দেখে বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
খেলার মাঠে এখন চাষাবাদের প্রস্তুতি
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজের একমাত্র খেলার মাঠে হালচাষ করা হয়েছে এবং ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাঠটি কলেজের পাহারাদারের কাছে ৪১ হাজার টাকার বিনিময়ে এক বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা বলছে, খেলার মাঠ চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হলে তাদের খেলাধুলার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।
অধ্যক্ষের ব্যাখ্যা
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ রফিক আলী বলেন, “আমরা ১৮ মাস ধরে কোনো বেতন পাচ্ছি না। শিক্ষকরা প্রায় না খেয়ে টিকে আছি। এমন পরিস্থিতিতে কলেজের মাঠসহ অন্যান্য জায়গা লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে কিছু অর্থ জোগাড় করে বকেয়া পরিশোধ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কলেজের বিদ্যুৎ বিলও কয়েক মাসের বকেয়া আছে। এত কষ্টের মধ্যে কলেজ চালাতে হচ্ছে।”
শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে টাকার বণ্টন
কলেজের হিসাবরক্ষক শাহ আহমদ আলী শান্ত জানান, লিজ বাবদ পাওয়া ৪১ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার টাকা শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয়দের ক্ষোভ
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কলেজের মাঠটি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, এলাকার ক্রীড়াপ্রেমী যুবকদেরও একমাত্র খেলার জায়গা। তারা বলেন, “এই মাঠে বছরের পর বছর ক্রিকেট, ফুটবল ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। মাঠে যদি ধান চাষ হয় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, মাঠে ধান চাষের সিদ্ধান্ত তাদের পড়াশোনা এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তারা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে।
গভর্নিং বডির প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কলেজ গভর্নিং বডির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, “খেলার মাঠ লিজ দেওয়ার বিষয়ে আমাকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।”
প্রশাসনের অবস্থান
লাখাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী শারমিন নেওয়াজ বলেছেন, “আমার কাছে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কেন বেতন বকেয়া?
সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, কলেজটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারিভাবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে অনুদান না পাওয়ায় কলেজের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাঠ লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যপুস্তক নির্ভর হয়ে যাবে, শারীরিক চর্চার সুযোগ হারাবে এবং মানসিকভাবে চাপে পড়বে। এছাড়া এলাকার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়তে পারে।
ভবিষ্যতের পথ
স্থানীয়রা মনে করেন, দ্রুত সমাধান না করলে এই ঘটনার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করতে এবং মাঠ পুনরায় খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে।
সারসংক্ষেপ
দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ লিজ দিয়েছেন। বর্তমানে মাঠে ধান চাষের প্রস্তুতি চলছে, যা দেখে বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
এম আর এম – ০৫১৮, Signalbd.com