সাপাহারে প্রথম ‘ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল’, আন্তর্জাতিক বাজারের স্বপ্ন

বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সাপাহারে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজন হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল’। আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এই উৎসব সাপাহারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘আমের বাণিজ্যিক রাজধানী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে।
সাপাহারে ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল: আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে, সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসবে এই বর্ণাঢ্য উৎসব। উৎসবের মূল স্লোগান: ‘আমের বাণিজ্যিক রাজধানী সাপাহার, নওগাঁ’।
ফেস্টিভ্যালে থাকবে আম বিক্রি ও বিতরণের জন্য বিশেষ স্টল যেখানে ক্রেতারা পাবেন সাশ্রয়ী ছাড়। বিদেশে আম রপ্তানির সুবিধার্থে ‘কুরিয়ার সার্ভিস’ স্টল থাকবে, যার মাধ্যমে ক্রেতারা সরাসরি দেশের মধ্যে এবং বিদেশে আম পাঠাতে পারবেন।
আমের নানা বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
উৎসবে থাকবে আম দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবারের স্টল। তাছাড়া আম চাষিদের প্রোফাইল, অনলাইন সরবরাহকারীদের তথ্য, এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের আমের প্রদর্শনীও থাকবে। দুই দিনব্যাপী উৎসবের প্রতিদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আম ভিত্তিক বিভিন্ন ভোজন প্রতিযোগিতা, যা দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
১০০ জন আম চাষির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ সেশন
মেলা চলাকালীন ১০০ জন নির্বাচিত আম চাষির জন্য আয়োজন করা হবে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সেশন। এই প্রশিক্ষণে আলোচিত হবে আমের রোগবালাই মোকাবিলা, উন্নত উৎপাদন পদ্ধতি, আধুনিক বাজারজাতকরণ কৌশল এবং বিদেশে আম রপ্তানির সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়া। এই সেশন চলাকালীন আম রপ্তানির নতুন বাজার সম্প্রসারণ ও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধার ওপর উন্মুক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বক্তব্য
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম আহমেদ বলেন,
“সাপাহারে উৎপাদিত আম দিয়ে দেশের বড় বড় কোম্পানি সারাবছর নানা ধরনের পণ্য তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু চাষিরা এখনও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। আমরা চাই সাপাহারকে আন্তর্জাতিক মানের আম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং চাষিদের যথাযথ মূল্য দিতে। এই ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল সেই প্রচেষ্টার অংশ।”
সাপাহারের আম চাষের চিত্র: পরিসংখ্যান ও অর্থনীতি
সাপাহারে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার আম চাষি রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। গত বছর এখানে আমের মোট ব্যাংক লেনদেন প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা এবং নগদ লেনদেন প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা দেশের অন্যতম বৃহৎ আম বাজার গড়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন হলে সাপাহারের আমের আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে এবং নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল: সাপাহারের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র
এই উৎসব শুধু বাণিজ্য নয়, বরং এটি সাপাহারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনের মাধ্যমে আম চাষ ও বিপণনের নতুন পথ খুলে দেবে। বিভিন্ন জাতের আমের প্রদর্শনীতে ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সাথেও সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। আম ভিত্তিক খাবার প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পী ও সংগীতশিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাপাহারের গুরুত্ব বৃদ্ধি
বাংলাদেশের আম রপ্তানির ক্ষেত্রে সাপাহারের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাপাহারের আমের গুণগত মান বিশ্বমানের, যা দেশীয় ও বৈশ্বিক বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই ফেস্টিভ্যাল দেশের অন্যান্য আম চাষী অঞ্চলের জন্যও এক অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবং আম রপ্তানির পরিধি বাড়াতে এই ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম।
কীভাবে উৎসব সফল হবে?
- বিশেষ ছাড় ও সহজ ক্রয়: ক্রেতারা উৎসবে আম কিনলে পাবেন বিশেষ ছাড়।
- কুরিয়ার সার্ভিস: বিদেশ ও দেশের মধ্যে আম পাঠানোর ব্যবস্থা।
- চাষিদের প্রশিক্ষণ: আধুনিক পদ্ধতি ও রোগবালাই মোকাবিলায় তথ্য ও সমাধান।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: উৎসবকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও আনন্দময়।
- আমের বিভিন্ন জাতের প্রদর্শনী: ক্রেতাদেরকে আম সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা প্রদান।
সামগ্রিক প্রভাব ও ভবিষ্যত প্রত্যাশা
‘ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’ সফল হলে সাপাহারের আম চাষের উৎপাদন ও বাজারে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি আশা করা যাচ্ছে। এটি চাষিদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং আমের রপ্তানি বিস্তারে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এছাড়া, স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নওগাঁর বাণিজ্যিক উন্নয়নে এ উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নওগাঁর সাপাহারে এই প্রথমবার আয়োজন করা হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘ম্যাঙ্গো ফেস্টিভ্যাল’, যা দেশের আম শিল্পে নতুন দিগন্ত খুলবে। আম চাষিরা প্রশিক্ষণ পাবেন, বিদেশে আম রপ্তানির পথ সুগম হবে এবং স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরা হবে। সাপাহার আন্তর্জাতিক মানের আম বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই উৎসব একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।