প্রাথমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগ সার্কুলার বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দাবি

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার বাতিলের দাবি জানিয়েছে। তারা চাইছে, সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা হোক। তাদের অভিযোগ, গানের শিক্ষক নিয়োগ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কৃতিগত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
বিস্তারিত
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে এই দাবি তোলা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইসলামী দল ও ওলামা সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, “দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না হলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব। গানের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছেন সরকার?”
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামবিদ্বেষী করে গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র চলছে। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি বলেন, “অপসংস্কৃতি উৎপাটন করতে হবে। আগে মুসলিম হতে হবে, তারপর অন্যান্য শিক্ষাও শেখা উচিত। স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষকের অভাব দ্রুত পূরণ করতে হবে।”
সেমিনার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে ওলামা-মাশায়েখদের বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
গত কয়েক বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন নতুন শিক্ষাকর্মসূচি চালু হয়েছে। এর মধ্যে গানের শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তবে কিছু ধর্মীয় সংগঠন এই পদক্ষেপকে দেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, দেশে আগে থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক অভিভাবকও চাইছেন, সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার সংমিশ্রণ করা হোক।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই দাবির প্রভাব প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনার নীতি এবং শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পড়তে পারে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীলতা, সংগীত ও শিল্প শিক্ষাকে উপেক্ষা করলে শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে প্রভাব পড়তে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনও এই দাবির বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। তবে সচেতন নাগরিক ও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, দেশের প্রাথমিক শিক্ষা নীতি প্রয়োজনীয় ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সংস্কার করা উচিত।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শিক্ষক কর্মরত। ধর্মীয় শিক্ষকের সংখ্যা মোট শিক্ষকের তুলনায় কম। এই দাবির বাস্তবায়ন হলে ধর্মীয় শিক্ষকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং বিদ্যমান শিক্ষাকর্মসূচিতে প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ পরিষদের দাবির ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারের কাছে এখন চ্যালেঞ্জ হলো, ধর্মীয় ও সৃজনশীল শিক্ষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে নীতি প্রণয়ন করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার একটি সমন্বিত ও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অপরিহার্য। তবে এই বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান কবে এবং কিভাবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
এম আর এম – ১৩৭৩,Signalbd.com