ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের

গাজায় নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং ত্রাণ সহায়তায় বাধা না সরালে ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া, যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, এবং হামাসের মন্তব্যসহ বিস্তারিত পড়ুন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে এবার কঠোর বার্তা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের তিন প্রভাবশালী দেশ—যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা ইসরায়েলকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তায় বাধা এবং বেসামরিক জনগণের ওপর অব্যাহত হামলা বন্ধ না হলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ তারা বেছে নিতে দ্বিধা করবে না।
গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত, বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ
গত শুক্রবার ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) নতুন করে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। এরপর থেকেই একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্র এই অভিযানের মানবিক পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার (১৯ মে) যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের পক্ষ থেকে দেওয়া যৌথ বিবৃতিটি আন্তর্জাতিক চাপকে আরও জোরদার করে তোলে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল সরকার বেসামরিক মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না—এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।”
তারা আরও যোগ করেছে, “পশ্চিম তীরেও বসতি সম্প্রসারণের যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, তাও আমরা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রয়োজনে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব, যার মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।”
নেতানিয়াহুর পাল্টা জবাব
তিন পশ্চিমা দেশের এই কঠোর ভাষার বিবৃতির জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চালানো জাতিগত নিধনের জন্য যেন পুরস্কার দিচ্ছেন। এভাবে তারা ভবিষ্যতের আরও নৃশংসতা আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।”
নেতানিয়াহু আরও বলেন, “ইসরায়েল ন্যায়সংগতভাবে আত্মরক্ষা করছে এবং তা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ না পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়। যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে আমাদের সব জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে এবং গাজা উপত্যকা থেকে অস্ত্র পুরোপুরি সরিয়ে নিতে হবে।”
মানবিক সংকটের মুখে গাজা
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মার্চ মাসের শুরু থেকেই গাজায় ত্রাণ—বিশেষ করে খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে গাজা চরম দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও সমাধানপ্রস্তাব
তিন দেশের নেতারা যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের নেতৃত্বে চলমান যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা একটি “দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান” বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়েও তারা অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এই যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। তারা এটিকে ‘সঠিক পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছে। হামাসের মতে, এই ধরনের আন্তর্জাতিক চাপই ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে পারে।
পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ
এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিলো তিনটি প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ, যারা এতদিন আত্মরক্ষার নামে ইসরায়েলের কার্যক্রমকে অনেকটা নীরব সমর্থন দিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, তবে তা হবে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রথম শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে।