বিশ্ব

গাজায় তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী গাজা সিটি ও এর আশেপাশে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করছে। এর লক্ষ্য ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা এবং গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটির দুটি উচ্চতর ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। একই সময়ে স্থল অভিযানও জোরদার করা হয়েছে। নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, “আমরা সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করছি, সন্ত্রাসী টাওয়ারগুলো ভেঙে দিচ্ছি।”

সাম্প্রতিক আক্রমণের বিবরণ

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে, ধ্বংস হওয়া টাওয়ারগুলো হামাস ব্যবহার করত সেনাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, গাজা সিটির ভেতরে ও উপকণ্ঠে অভিযান আরও তীব্র করা হচ্ছে।

সামরিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযান মূলত গাজা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ও আশেপাশের এলাকা জোরদার করার ওপর কেন্দ্রীভূত। বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল সেনা অভিযানও চলছে।

মানবিক প্রভাব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নেতানিয়াহু বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য গাজায় নতুন একটি “মানবিক এলাকা” নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবেন। ইসরায়েলি বিমান শনিবার গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলে হাজারো লিফলেট ফেলেছে, যাতে বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকা ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং সংবাদ সংস্থাগুলি জানিয়েছে, গাজা সিটির প্রায় এক লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই নিরাপদ এলাকা খুঁজে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে অনেক বাসিন্দা এ স্থানান্তরে অংশ নিতে পারছে না।

গাজার বাসিন্দা মুস্তাফা আল-জামাল এএফপিকে বলেন, “দক্ষিণ গাজায় যে এলাকাকে নিরাপদ বলা হচ্ছে, সেটি বারবার বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব? আমাদের কাছে টাকা নেই, তাঁবু নেই, ঘর নেই, খাবার নেই।”

আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থল অভিযান চলছিল। এই আক্রমণকে ইসরায়েল হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব হিসেবে দেখছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এ আক্রমণ ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামাস মানুষকে সরতে দিচ্ছে না এবং তাদেরকে মানব ঢালের মতো ব্যবহার করছে। এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার বিষয়বস্তু।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এদিকে শনিবার ইসরায়েলে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অনেকে সরকারকে গাজা সিটি দখলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সেখানে আটক রাখা বন্দীদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।

একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে, বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তারা বলেছে, হামাস বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করার আগে মানুষের জীবন রক্ষা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলি সেনা অভিযান ও বোমা বর্ষণ হামাসের ওপর চাপ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তারা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসী অবকাঠামোর ধ্বংস ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য হলেও মানবিক সংকট বাড়ছে।

সারসংক্ষেপ  

নেতানিয়াহুর ঘোষণা অনুযায়ী গাজা সিটি ও আশেপাশে সেনা অভিযান তীব্রভাবে চলমান। এই সামরিক কার্যক্রমের কারণে ফিলিস্তিনিদের মানবিক নিরাপত্তা বিপন্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং শিগগিরই প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

গাজা সংকট কবে শান্তির দিকে যাবে তা নির্ভর করছে ইসরায়েলি সেনা অভিযান এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর। পরিস্থিতি তীব্র ও সংবেদনশীল, তাই মানুষকে সচেতন ও নিরাপদ থাকার জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান করা হচ্ছে।

এম আর এম – ১২২৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button