প্রধান উপদেষ্টাকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান দেবে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে মালয়েশিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (Universiti Kebangsaan Malaysia – UKM) সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করতে যাচ্ছে। আগামী ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার কেবাংসানে অনুষ্ঠিত হবে এক বিশাল ও গৌরবোজ্জ্বল অনুষ্ঠান, যেখানে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির গুরুত্ব ও অর্থ
সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি এমন একটি বিশেষ সম্মান, যা কোনো ব্যক্তির জীবনের অসামান্য অবদান, গবেষণা বা সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করে। প্রফেসর ইউনূসের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোক্রেডিট ধারণা চালু করে বিশ্বব্যাপী বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তার অবদান শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক আলোকবর্তিকা হিসেবে বিবেচিত।
সফর সূচি ও কর্মসূচি
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১১ আগস্ট মালয়েশিয়া সফর শুরু করেন। এই তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি অংশ নেবেন বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাবিদ ও সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে। সফরের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ ১৩ আগস্ট, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (UKM)-এ তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন, যেখানে তার জীবনের গল্প, সফলতা, সামাজিক উদ্যোগ এবং শিক্ষাবিষয়ক মূল্যবান দিকগুলো তুলে ধরবেন।
সেই দিন তিনি মালয়েশিয়ার নেগেরি সেমবিলান প্রদেশের শাসক টুয়াঙ্কু মুহরিজ ইবনে মুনাভিরের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এই সাক্ষাৎ দুই দেশের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
দুই দেশের শিক্ষা ও সামাজিক উদ্যোগে সহযোগিতার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া অনেক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাবিষয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিশেষত উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা গত কয়েক বছরে দৃঢ় হয়েছে। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফর দুই দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করেন ‘গ্রামীণ ব্যাংক’, যা দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোক্রেডিট ব্যবস্থার সফল মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। তার এই উদ্যোগ অসংখ্য দরিদ্র মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলেছে। ২০০৬ সালে তিনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বাংলাদেশের গৌরব।
তার সামাজিক ব্যবসা ধারণা অর্থনীতির একটি নতুন পথ উন্মোচন করেছে, যেখানে লাভের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নকেই মূল লক্ষ্য করা হয়। এর ফলে শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নীতি প্রণেতারা তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা বিশ্বের দরিদ্রতা ও বৈষম্য দূরীকরণের পথ অনুসরণ করছেন।
মালয়েশিয়ায় তার সম্মাননা—এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান (UKM) মালয়েশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে উচ্চমানের গবেষণা ও শিক্ষা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং মানবিক বিষয়ে বিশেষভাবে সমাদৃত। তাই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্বকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতার নিদর্শন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সহযোগিতার সুযোগ
প্রফেসর ইউনূস মালয়েশিয়া সফরের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার সম্ভাবনাও যাচাই করবেন। বিশেষ করে সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (SDGs) মিলেমিশে কাজ করার ব্যাপারে নতুন উদ্যোগ আসতে পারে।
এছাড়া, শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের জন্য সহায়ক হবে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের এক বিশাল গৌরব। এটি দেশের শিক্ষা ও গবেষণার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতির প্রতীক।
মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান এবং বাংলাদেশের শিক্ষা-সামাজিক ক্ষেত্রের এই সহযোগিতা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও উন্নয়নের পথকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
MAH – 12258 , Signalbd.com