বিশ্ব

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়

লন্ডনে বৈঠকের সময় গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে দুই নেতার মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ, সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও প্রকট

ঘটনাপ্রবাহ

লন্ডনে বৈঠকে বসেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক শুরু হয় হাসি ও করমর্দনের মাধ্যমে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে গাজা যুদ্ধ, আর সেখানেই তৈরি হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেননি, বরং তীব্র বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন।

বৈঠকের বিস্তারিত আলোচনা

ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ইসরাইলের সামরিক অভিযানের সমালোচনা করেন। তিনি গাজায় মানবিক সংকটকে “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইসরাইলকে আক্রমণাত্মক কার্যক্রম বন্ধ করতে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সাহায্য পুনরায় চালুর উপর জোর দেন।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট হার্জোগ হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে সামরিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এটি কঠিন কিন্তু সৎ আলোচনা ছিল। মিত্রদের মধ্যে কখনো কখনো তর্ক হতে পারে, তবে সেটাই স্বাভাবিক।”

সম্পর্কের টানাপোড়েনের পটভূমি

স্টারমারের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ইসরাইলের সঙ্গে লন্ডনের সম্পর্ককে নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এ ছাড়া, দোহায় হামাস নেতাদের উপর ইসরাইলি বিমান হামলার ঘটনায়ও ব্রিটিশ সরকার কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিরোধ বাড়ছে। লেবার পার্টির নতুন সরকারের অবস্থান ইসরাইলের প্রতি পূর্বের তুলনায় বেশি সমালোচনামূলক, যা ভবিষ্যতে কূটনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বৈঠকের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু কূটনীতিক মনে করছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তিসঙ্গত হলেও এটি দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে দুর্বল করতে পারে। অপরদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্টারমারের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

সংখ্যা ও প্রেক্ষাপট

জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান সংঘাতের কারণে গাজায় কয়েক লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটে ভুগছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে এবং স্বাস্থ্য অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর “মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ” মন্তব্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বমিডিয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক অধ্যাপক রিচার্ড থমাস মনে করেন, “স্টারমার সরকারের অবস্থান দেখায় যে যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে এর ফলে লন্ডন-তেল আভিভ সম্পর্ক নতুন পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।”

অন্যদিকে, ইসরাইলি বিশ্লেষক ইয়োনাতান লেভি বলেছেন, “হার্জোগের সফর প্রমাণ করে যে, ইসরাইল এখনও ব্রিটেনকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখে। যদিও মতবিরোধ রয়েছে, তবুও উভয় পক্ষই সম্পর্ক ভেঙে দিতে চাইবে না।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বৈঠকে স্পষ্ট হয়েছে যে, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা কমে যাচ্ছে। তবে কূটনীতিকরা মনে করছেন, উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আলাপ চালিয়ে যাবে। আগামী মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই ইস্যু নতুন করে আলোচনায় আসতে পারে, যেখানে যুক্তরাজ্য ও ইসরাইলের অবস্থান আবারও মুখোমুখি হতে পারে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগের বৈঠক একদিকে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে স্পষ্ট করেছে, অন্যদিকে গাজা যুদ্ধের মানবিক বিপর্যয়কে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। এখন প্রশ্ন হলো—মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলগত স্বার্থের টানাপোড়েনে কোন পথে এগোবে যুক্তরাজ্য-ইসরাইল সম্পর্ক?

এম আর এম – ১২৯৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button