বিশ্ব

পাকিস্তানকে তালেবানের কঠোর বার্তা: আফগান সার্বভৌম লঙ্ঘনের পরিণতি হবে ভয়াবহ

প্রথম অংশ: ঘটনার মূল বিবরণ

২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নঙ্গরহার এবং খোস্ত প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাদের বিমান হামলায় অন্তত তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং সাতজন আহত হন। এ হামলার পর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাবুলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ধরনের হামলা আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাবুলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়। আফগান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে, এমন কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভয়াবহ হবে।

দ্বিতীয় অংশ: আফগান সরকারের বিবৃতি

আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়:

“পাকিস্তানি সেনারা ডুরান্ড লাইনের নিকটবর্তী আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলা ইমারাতে ইসলামিয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করা হবে না।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পাকিস্তানকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অখণ্ডতায় হস্তক্ষেপ একটি লাল দাগস্বরূপ বিষয়।

তৃতীয় অংশ: পাকিস্তানের অবস্থান

পাকিস্তান সাধারণত দাবি করে থাকে যে, সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে তাদের সামরিক অভিযান চালাতে হয়। তবে আফগানিস্তানের দাবি, পাকিস্তান প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালায়, যা আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিপন্থী।

চতুর্থ অংশ: সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস (ডুরান্ড লাইন ইস্যু)

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের মূল কারণ ডুরান্ড লাইন। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে আঁকা এই সীমারেখা আফগানিস্তান কখনো স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান এটিকে বৈধ আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে দাবি করে, তবে আফগানিস্তান সবসময় তা অস্বীকার করেছে।
এই সীমান্তে প্রায় ২৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষ হয়েছে।

পঞ্চম অংশ: তালেবানের অবস্থান ও হুঁশিয়ারি

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। তালেবান সরকার বলছে, আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানি সেনাদের হামলা তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। তালেবান মুখপাত্র বারবার ঘোষণা করেছেন যে,

“যেকোনো আক্রমণের জবাব দেওয়া হবে। আফগানিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র এবং তার সীমান্ত রক্ষায় কোনো আপস করবে না।”

ষষ্ঠ অংশ: সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা

২০২৪ সালের শেষ থেকে সীমান্তে প্রায়ই ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছে। পাকিস্তান অভিযোগ করে যে, আফগানিস্তান থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (TTP) জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে। অপরদিকে, আফগানিস্তান দাবি করে, পাকিস্তান নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দায় অন্যের ওপর চাপাচ্ছে।

সপ্তম অংশ: আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দুই দেশের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, সীমান্তে বেসামরিক লোকদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করা উচিত।

অষ্টম অংশ: ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা না কমে তবে সীমান্ত এলাকায় পূর্ণমাত্রার সংঘাত শুরু হতে পারে। এতে শুধু আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত বিরোধ নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক হামলা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহল চায় উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পাক, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

MAH – 12556,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button