ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জরুরি নির্দেশনা

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে পরীক্ষায় সঠিক সময়েই উপস্থিত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের সমাবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়: পরিস্থিতি ও প্রভাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায়ই রাজনৈতিক আন্দোলন ও সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ হলে তা প্রভাব ফেলে আশেপাশের এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এমন সমাবেশ হলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এবারের জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশও তাই নিরাপত্তার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একযোগে কাজ করে যাতে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে এবং সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি নির্দেশনার মূল বিষয়সমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে:
- শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে, যা রাজধানীর ওই এলাকায় যাতায়াতের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
- পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
- যথাসম্ভব প্রাক সময়ের আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে যাতায়াতে কোনো বিঘ্ন ঘটলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণে সমস্যা না হয়।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা এবং পরীক্ষার সময়সূচি
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অনুষদ ও বিভাগ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী শনিবার পরীক্ষা দিতে উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোয় অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ চালানো হবে। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা হয়েছে যে তারা প্রয়োজনে সময়ের অতিরিক্ত ব্যবধান রেখে ঘর থেকে বের হোক।
বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের রাস্তাগুলোতে যানজট ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই গাড়ি চালক ও পিকেটে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবেন।
রাজনৈতিক সমাবেশ ও শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় প্রভাব
রাজনৈতিক দলগুলো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে, তবে তাদের সমাবেশ ও কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের জীবনে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যখন কঠোর পরীক্ষার সময় চলছে, তখন এসব রাজনৈতিক সমাবেশে অপ্রত্যাশিত অবরোধ, যানজট ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীরা জানেন, পরীক্ষার সময় যেন কেবলমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে আসা-যাওয়া সহজ হয়, সেই লক্ষ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই নির্দেশনা জারি করেছে। নিরাপত্তার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক শান্তি বজায় রাখা জরুরি।
প্রশাসনের অন্যান্য প্রস্তুতি ও সমাধান
সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যৌথভাবে এই সমাবেশের জন্য নিরাপত্তা ও যাতায়াতের যথাযথ ব্যবস্থাপনা করেছে। সড়ক নিরাপত্তা বাহিনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা সংস্থা ও পুলিশের যৌথ তৎপরতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা চেষ্টা করব যাতে শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।”
শিক্ষার্থীদের করণীয়
১. আগে থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ঠিকানা ও যাতায়াতের উপায় সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
২. যানজট এড়াতে প্রয়োজনে বিকল্প রুট বা পায়ে হেঁটে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
৩. পরীক্ষা শুরুর সময় থেকে অন্তত ১-২ ঘণ্টা আগে কেন্দ্র এলাকায় উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশনা মেনে চলুন।
৫. যদি জরুরি কোনো সমস্যা হয়, তবে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অথবা নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
রাজনৈতিক সমাবেশ যেখানেই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, তা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা, সহমর্মিতা ও সময়ানুবর্তিতা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সকলেই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।