আন্তর্জাতিক মানের স্কুল শিক্ষা শুরু ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকার শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের পথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে একত্রিত করে গঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে চলমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ধারাকে বদলে দেওয়ার এক নতুন নজির। এটি হবে একটি ‘স্কুলভিত্তিক’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে আধুনিক আন্তর্জাতিক শিক্ষাদানের মাপকাঠি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাগত পরিবেশ প্রদান করা হবে।
সাত কলেজকে চারটি ‘স্কুল’ বা অনুষদে বিভক্ত করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো গড়া হয়েছে, যা শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে ও বিশেষায়িত শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে সহায়ক হবে।
সাত কলেজ থেকে চারটি স্কুল, আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সাতটি কলেজ হলো:
- ঢাকা কলেজ
- ইডেন মহিলা কলেজ
- বেগম বদরুন্নেসা কলেজ
- সরকারি বাঙলা কলেজ
- সরকারি তিতুমীর কলেজ
- কবি নজরুল সরকারি কলেজ
- সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
এদের থেকে চারটি স্কুল বা অনুষদ গঠন করা হয়েছে, যা হবে:
- স্কুল অব সায়েন্স
পরিচালিত হবে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ থেকে। এই স্কুলে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি নিয়ে পড়াশোনা হবে। - স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ
সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে পরিচালিত এই স্কুলে মানবিক ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়াদি পড়ানো হবে। - স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ
সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের অংশগ্রহণে ব্যবসায় প্রশাসন ও অর্থনীতি সম্পর্কিত কোর্স চালানো হবে। - স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস
কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে পরিচালিত, যেখানে আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষাদান হবে।
হাইব্রিড ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি শিক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার
‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ পরিচালনায় থাকবে একটি নতুন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পূর্ণ খাপ খায়। এখানে শিক্ষা হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি অর্থাৎ একাধিক বিষয়ের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি, শিক্ষা হবে হাইব্রিড পদ্ধতিতে, যেখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে এবং ৬০ শতাংশ ক্লাস সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
এই শিক্ষাদানের পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলবে, একই সঙ্গে সরাসরি ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় নিশ্চিত করবে।
সব ধরনের পরীক্ষা সশরীরে গ্রহণ করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য মূল্যায়ন নিশ্চিত হয়।
২৩টি বিষয়ের মাধ্যমে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পর্যায়ে মোট ২৩টি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলামের অধীনে শিক্ষা লাভ করবেন। এ বছর যারা ভর্তি হবেন, তারা বিদ্যমান কাঠামো অনুযায়ী পড়াশোনা করবেন, তবে আগামী বছর থেকে সম্পূর্ণ নতুন কাঠামো চালু হবে।
বিশেষ করে, আইন অনুষদের ক্ষেত্রে আগামী বছর থেকে নতুন কাঠামোয় ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে। এটি হবে নতুন যুগের এক আধুনিক আইনি শিক্ষা ব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষার্থীদের শুধু সুত্রপাঠ নয়, বাস্তব জীবনের আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা অর্জন করানো হবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টি
ঢাকা মহানগরীর সাতটি প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ সরকারি কলেজগুলোর মধ্যে বহু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিদিন ছুটে আসে। কিন্তু অতিরিক্ত ভর্তি ও সীমিত সম্পদের কারণে শিক্ষার মান ও পরিবেশে নানা সীমাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছিল। এ সমস্যার সমাধান করতে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে না, এটি হবে একটি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে গবেষণা, প্রযুক্তি ও শিক্ষার গুণগত মান সর্বোচ্চ স্তরে থাকবে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হলো, ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আদর্শ হবে।
অন্যান্য দেশের সমমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু সম্পূর্ণ স্কুলভিত্তিক কাঠামো গঠন করে একত্রে সাত কলেজকে যুক্ত করে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ ঢাকার জন্য এক নতুন দিগন্ত।
আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের শুধু পড়াশোনা নয়, গবেষণা, প্রোজেক্ট ও প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করতেও সক্ষম হতে হবে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন শিক্ষাদানের কাঠামো সেই লক্ষ্যের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা ও সম্ভাবনা
- উন্নত অবকাঠামো: আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, ডিজিটাল ল্যাব, লাইব্রেরি ও গবেষণার সুযোগ।
- হাইব্রিড ক্লাস: অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে শিক্ষা, যা সময় ও জায়গার ঝামেলা কমাবে।
- বিশ্বমানের শিক্ষকবৃন্দ: দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষকগণ পড়াবেন।
- ইন্টারডিসিপ্লিনারি শিক্ষা: একাধিক বিষয়ে সমন্বিত পড়াশোনা, যা দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
- প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা: গবেষণা, ফিল্ড ওয়ার্ক ও ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে বাস্তব দক্ষতা অর্জন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি হবে ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার মান উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়। এখানে আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে।
MAH – 12127 , Signalbd.com