বিকাশে ডিজিটাল ঋণের সীমা ৫০ হাজার টাকা হলো

ঢাকা, ১৮ জুন ২০২৫ — দেশের জনপ্রিয় মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ এবং বেসরকারি ব্যাংক দি সিটি ব্যাংক যৌথভাবে গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে এখন থেকে বিকাশ ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় ও প্রয়োজনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। পূর্বে এই সীমা ছিল সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।
আজ বিকাশের অফিসিয়াল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা আসে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, যেসব বিকাশ গ্রাহক ডিজিটাল ঋণের যোগ্য, তারা ব্যাংকের নিয়ম মেনে দ্রুত ও সহজ প্রক্রিয়ায় জামানত ছাড়া বিকাশ অ্যাপ থেকে ঋণ নিতে পারবেন। ঋণের পরিমাণ নির্ভর করবে গ্রাহকের লেনদেন ও পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধের রেকর্ডের ওপর।
ডিজিটাল ঋণ: সিটি ব্যাংক-বিকাশের যুগান্তকারী উদ্যোগ
২০১৯ সালের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জন্য আর্থিক সেবা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২১ সালে বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল ন্যানো ঋণ সেবা চালু হয়। শুরু থেকেই এই সেবা পেয়েছে ব্যাপক সাড়া। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ গ্রাহক বিকাশের মাধ্যমে সিটি ব্যাংক থেকে মোট ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন, যা ৫৫ লাখের বেশি লেনদেন হিসেবে রেকর্ডে রয়েছে।
এই ঋণ সেবার সুবিধা হলো গ্রাহককে ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ প্রক্রিয়া না করতে হয়, কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হয় না। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ডিজিটাল এবং স্বয়ংক্রিয়। তাই সময় সাশ্রয় হয়, ঋণ পাওয়া দ্রুত হয়।
কীভাবে ঋণ নেওয়া যাবে বিকাশ থেকে?
বিকাশ অ্যাপে লগইন করে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজে ঋণ নেওয়া যাবে:
- ‘লোন’ আইকনে ট্যাপ করুন।
- কাঙ্ক্ষিত ঋণের পরিমাণ লিখুন (৫০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত)।
- ঋণের শর্তাদি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সম্মতি দিন।
- বিকাশ পিন দিয়ে লেনদেন নিশ্চিত করুন।
- মুহূর্তেই বিকাশ অ্যাকাউন্টে ঋণের টাকা জমা হবে।
ঋণ নেওয়ার পর, নির্ধারিত মাসিক কিস্তি গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাটা হবে। গ্রাহক চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আংশিক বা পুরো ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন, যার জন্য অতিরিক্ত কোনো চার্জ লাগবে না।
ঋণের শর্ত ও পরিশোধ সুবিধা
- সর্বোচ্চ ঋণ সীমা: ৫০,০০০ টাকা
- সর্বোচ্চ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ: ৬ মাস
- ঋণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল, কোনো জামানত বা কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই।
- আগাম পরিশোধ করলে শুধু ব্যবহৃত দিনের জন্য সুদ দিতে হবে।
- বিকাশ ও সিটির ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা অনুযায়ী ঋণের যোগ্যতা নির্ধারিত হয়।
বিকাশ কেন সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয়?
বিকাশ দীর্ঘদিন ধরে দেশের গ্রাহকদের আর্থিক চাহিদা বুঝে ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে। নিয়মিত বিকাশ ব্যবহার করে লেনদেন বাড়ালে গ্রাহকের ঋণ পাওয়ার সুযোগ আরও বাড়ে। পেমেন্ট, সেভিংস, রিচার্জসহ নানা আর্থিক সেবা এক জায়গায় পেয়ে থাকে ব্যবহারকারীরা। এর ফলে তাদের ঋণ গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ঋণ সীমা বৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে এবং গ্রাহকের চাহিদা ও আস্থা বিবেচনায় ডিজিটাল ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের আর্থিক প্রযুক্তি খাতের নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে।
ডিজিটাল ঋণ: দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বড় সুযোগ
ডিজিটাল ঋণ সেবাটি বিশেষভাবে সুবিধা দিচ্ছে তাদের যারা ব্যাংকে গিয়ে ঋণ নেওয়ার জটিলতা সহ্য করতে পারেন না বা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত নন। গ্রামীণ থেকে শহর পর্যন্ত যেকোনো স্থানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দ্রুত ঋণ পাওয়া যাচ্ছে।
বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিকাশ ও সিটি ব্যাংক এই সেবার অভিজ্ঞতা থেকে আরও নতুন ডিজিটাল আর্থিক পণ্য চালু করার পরিকল্পনা করছে। ছোট ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই ঋণ ব্যবহার করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।