বিশ্ব বাঘ দিবস আজ, সংখ্যা বাড়লেও বাঘের অস্তিত্ব এখনো ঝুঁকির মুখে

বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫: বাঘের সংখ্যা বেড়েছে সুন্দরবনে, তবে তাদের অস্তিত্ব এখনো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, খাবারের সংকট, অবৈধ শিকার এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা না থাকায় বাঘের জীবন বিপন্ন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ ২৯ জুলাই ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, কিন্তু পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, তবে আশঙ্কা এখনও কাটেনি। ২০০৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৪০টি। কিন্তু ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। এই কমতির পেছনে ছিল নানা কারণ, যার মধ্যে অন্যতম ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অবৈধ শিকার এবং মানুষের দখলের চাপ।
এরপর থেকে বন বিভাগের উদ্যোগে ব্যাপক সতর্কতা ও সংরক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪। ২০২৪ সালের সর্বশেষ জরিপে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টিতে। তবে এই সংখ্যা মোটিকেই পুরোপুরি নয়, কারণ শাবক ও মৃত বাঘের সংখ্যা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।
বাঘের মৃত্যুর কারণ এবং শিকারিদের দৌরাত্ম্য
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনে মোট ৯টি বাঘ মারা গিয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ শিকার ও শিকারিদের হাত থেকে বাঘের মৃত্যুর ঘটনা বেশি। একই সময়ে দুইটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়েছে, যা শিকারিদের অপতৎপরতার প্রমাণ।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, “সুন্দরবনে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী শিকারিরা বাঘের জন্য বড় হুমকি। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সুন্দরবনের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও খাদ্যের সংকট
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার মানের অবনতি অনেকটাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। সমুদ্রস্তরের বৃদ্ধি, জোয়ারের অস্বাভাবিকতা এবং গ্রীষ্মের তীব্রতা বাঘের বাসস্থানের পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বন্যপ্রাণীর খাদ্যের অভাবও বাঘদের দুর্বল করছে।
এই কারণগুলো দূর করতে হলে বনাঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে খুলনা বন বিভাগের কর্মসূচি
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে খুলনা বন বিভাগ এলাকায় বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা বন সংরক্ষক ইমরান জানান, আজ সকাল ১০টায় খুলনার দুটি রেঞ্জে এবং দুপুর ২টায় সাতক্ষীরার দুটি রেঞ্জে বাঘ সুরক্ষায় জনসচেতনতামূলক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তাদের বক্তব্য, জনসাধারণের মাঝে বাঘের গুরুত্ব ও সুরক্ষার বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে।
বাঘ সংরক্ষণে আমাদের করণীয়
বাঘ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সুন্দরবনের জন্য নয়, সমগ্র দেশের বন্যপ্রাণীর ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
- অবৈধ শিকার বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রয়োগ
- বাঘের অভয়ারণ্য এলাকায় পর্যাপ্ত পাহারা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনা
- স্থানীয় জনগণকে বাঘ সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করা
- বাঘের খাদ্যের প্রাচুর্য নিশ্চিত করা
এসব কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে।
সুন্দরবন: বাঘের শেষ অবলম্বন
সুন্দরবন বিশ্বখ্যাত বাঘের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে প্রায় ৪৩০ বাঘের বাস। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষা শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক একটি দায়িত্বও বটে।
বাঘের সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন, তাদের অস্তিত্ব এখনো ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। নিরাপদ আবাস ও পর্যাপ্ত খাদ্য ছাড়া বাঘ বাঁচবে না।
বিশ্ব বাঘ দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য
বিশ্ব বাঘ দিবস ২৯ জুলাই পালিত হয় ২০১০ সাল থেকে। এর উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, বন বিভাগ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং স্থানীয় জনগণ একসঙ্গে কাজ করে বাঘের জন্য নিরাপদ আবাস ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে।
বাংলাদেশেও এই দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়। যেখানে বাঘের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা হয়।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সুন্দরবনে, কিন্তু ঝুঁকি এখনো কমেনি। বাঘের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, অবৈধ শিকার বন্ধ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আমরা সকলেই সচেতন হই, বাঘের নিরাপত্তার জন্য একসঙ্গে কাজ করি এবং সুন্দরবনকে বাঘের স্বর্গধাম হিসেবে রক্ষা করি।
MAH – 12009, Signalbd.com