শেরপুরে বাস চাপায় সাবেক সেনাসদস্য নিহত, বিক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরাল

শেরপুরের ভাতশালা ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকায় আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় সাবেক সেনাসদস্য মজনু মিয়া বাস চাপা পড়ে মারা গেছেন। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসী প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
নিহত মজনু মিয়া ছিলেন হাওড়া কামারবাড়ি গ্রামের সফর উদ্দিনের ছেলে এবং সাবেক সেনাসদস্য। তিনি মোটরসাইকেলে শেরপুর শহর থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। বাঁশতলা এলাকায় পৌঁছানোর সময় ‘সাম্মি ডিলাক্স’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস তাঁর মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মজনু মিয়ার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানায়, দুর্ঘটনার পরেই বাসের চালক ও অন্যান্য যাত্রী ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসলেও, এলাকাবাসীর বাধার কারণে সেটি কাজ করতে পারেনি এবং ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
যান চলাচল বিঘ্নিত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী
বাসটিতে আগুন ধরানোর ফলে শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের ওই অংশে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ভূঁইয়া জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। বাসচাপার ঘটনা তদন্ত চলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
সাবেক সেনাসদস্য মজনু মিয়া: এক সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
মজনু মিয়া ছিলেন এক সময়ের কর্মঠ সেনাসদস্য, যিনি দেশের জন্য দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের চেষ্টা করছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি ছিলেন একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ, যিনি এলাকায় সবাইকে সম্মান করতেন। তবে আজকের এই দুর্ঘটনা তাঁর পরিবারসহ পুরো এলাকাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
বাসচাপা দুর্ঘটনার পেছনের কারণ ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
শেরপুরে গত কয়েক বছরে যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষের ঘটনাগুলো বেড়ে গেছে। নানা কারণে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা বাড়ছে, যার মধ্যে ত্বরান্বিত গতি, অশৃঙ্খল চালক এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব অন্যতম।
বাঁশতলা এলাকার স্থানীয়রা জানান, ‘সাম্মি ডিলাক্স’ বাসের চালক অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। অনেকবার আশঙ্কাজনকভাবে বাস চলার ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এই দুর্ঘটনা এলাকার মানুষের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “আমরা চাই যেন প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। চালক ও বাস মালিকদের দায়িত্বশীল হতে হবে, না হলে আরও অনেক জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।”
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের করণীয়
বাংলাদেশে প্রতিদিন শত শত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস এবং মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
সরকারের উচিত—
- বাস চালকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স পরীক্ষা কঠোর করা।
- যাত্রীবাহী গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিড গভার্নার লাগানো বাধ্যতামূলক করা।
- সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার ও জরুরি সেবা উন্নত করা।
- মোটরসাইকেল চালকদের জন্য হেলমেট ব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে দ্রুত এবং কার্যকর উদ্ধার ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনা: এক নজরে
গত মাসেও শেরপুরসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ করে বাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা প্রয়োজন।
শেরপুরে বাসচাপা দুর্ঘটনার প্রভাব ও স্থানীয় ভাবনা
এই দুর্ঘটনার পর শেরপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। পরিবার হারানো মজনু মিয়ার আত্মীয়রা বিচলিত, তাঁদের দাবি দ্রুত বিচার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এলাকার সামাজিক নেতৃবৃন্দও প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন, যাতে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
শেরপুরের বাঁশতলা এলাকায় বাস চাপায় সাবেক সেনাসদস্য মজনু মিয়ার মৃত্যু শোকের সাথে গ্রহণ করেছে পুরো জেলা। এই দুর্ঘটনা শুধু এক ব্যক্তির জীবন শেষ করেনি, বরং সতর্ক করেছে সবাইকে যে সড়ক নিরাপত্তা কতটা জরুরি। চলমান অবহেলা বন্ধ করতে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়।
শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও দায়িত্ব নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা মানতে হবে।