গাজায় ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে ৭১ হাজার শিশু ও ১৭ হাজার মা

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন এবং অবরোধের কারণে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় বর্তমানে ৭১ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের জরুরি চিকিৎসা ও পুষ্টিসেবা প্রয়োজন।
সহিংসতা ও অবরোধে আটকে জীবনরেখা
গত ২ মার্চ ২০২৫ থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের প্রবেশ ব্যাহত হয়। ইউনিসেফের ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (IPC)’ অনুযায়ী, গাজার ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বর্তমানে “দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে” অবস্থান করছে। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে যে চলমান অবরোধ, নতুন সামরিক অভিযান এবং খাদ্য সরবরাহে ঘাটতির কারণে গাজায় অপুষ্টি ও মৃত্যুহার আরও বাড়তে পারে।
শিশুদের জন্য প্রতিদিনই অপুষ্টির ভয়
IPC-র মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজার অধিকাংশ শিশু বর্তমানে চরম খাদ্য বঞ্চনার শিকার। স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানির প্রবল ঘাটতি, বিশেষত উত্তর গাজা, গাজা সিটি এবং রাফা গভর্নরেটে শিশুদের মধ্যে দ্রুত হারে অপুষ্টির বিস্তার ঘটাচ্ছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন,
“দুর্ভিক্ষ হঠাৎ করে আসে না। এটি দেখা দেয় তখন, যখন খাদ্য সরবরাহ বন্ধ থাকে, স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়।”
তিনি বলেন,
“আমরা আগেই বারবার সতর্ক করেছি। এখনই পদক্ষেপ না নিলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
খাবার আছে সীমান্তে, কিন্তু পৌঁছাচ্ছে না মানুষের কাছে
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন,
“গাজার মানুষ না খেয়ে আছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। মার্চের শুরুতে সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা সাহায্য পাঠাতে পারছি না।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা যদি অপেক্ষা করি দুর্ভিক্ষ ঘোষণার পর, তবে সেটা অনেকের জন্য অনেক দেরি হয়ে যাবে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানি—সবই শেষ হয়ে গেছে
গত এপ্রিলেই ডব্লিউএফপি গাজায় তার শেষ খাদ্য মজুত শেষ করে। ২৫টি বেকারির কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে গমের আটা ও জ্বালানির অভাবে। ইউনিসেফ পানি ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রাখলেও থেরাপিউটিক চিকিৎসা সামগ্রীর মজুত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
সীমান্তে অপেক্ষমাণ কোটি মানুষের খাবার
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা, যা প্রায় ১০ লাখ মানুষকে চার মাস খাওয়াতে যথেষ্ট, তা সীমান্তে প্রস্তুত আছে। শত শত প্যালেট পুষ্টি চিকিৎসার সরঞ্জামও প্রবেশের অপেক্ষায়। তবে সীমান্তগুলো খোলার অনুমতি না মেলায় এই সাহায্য আটকে আছে।
ইউনিসেফ-ডব্লিউএফপির জরুরি অনুরোধ
ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপি গাজায় জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। তারা আবারও সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবিলম্বে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সংক্ষেপে মূল বিষয়:
- গাজায় ৭১ হাজার শিশু ও ১৭ হাজার মা মারাত্মক অপুষ্টিতে।
- ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
- ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সীমান্তে আটকে।
- আন্তর্জাতিক সহায়তা না পৌঁছালে মৃত্যুহার বিপজ্জনকভাবে বাড়বে।