সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থান

সারাদেশ থেকে আসা হাজারো এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একত্রিত হয়েছেন। এতে তোপখানা রোডের উভয় দিকে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এলাকা ছাড়বেন না।
শিক্ষক সমাবেশ ও অবস্থান
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে সচিবালয়ের মোড় থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত শিক্ষকরা অবস্থান নিয়েছেন। প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ থাকায় গাড়ি, বাস ও অন্যান্য যানবাহন বিকল্প পথে পরিচালিত হচ্ছে। এই সমাবেশের আয়োজন করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট।
সিলেটের কানাইঘাট থেকে আসা শিক্ষক আলী রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “বারবার আশ্বাস নিয়ে আমরা ফিরে গেছি। এবার আর শুধুই আশ্বাসে কাজ হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।”
আন্দোলনের পটভূমি
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের আন্দোলনের পর সরকার ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এবং ২০% বৈশাখী ভাতা চালু করার পাশাপাশি জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষা উপদেষ্টা বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২২তম দিনে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বাজেটে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। জোট ১০ আগস্টের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছিল, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়।
জোটের বক্তব্য
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিগুলো জানিয়ে আসছি। ২০১৮ সালে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টাও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। অথচ আমরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে আমরা একযোগে আমাদের দাবি তুলে ধরব এবং প্রয়োজনে সচিবালয় পর্যন্ত পদযাত্রা করব। এটি শুধুই একটি কর্মসূচি নয়, বরং ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয়করণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিক। যদি এবারও দাবি পূরণ না হয়, তবে আমরা আরও বৃহত্তর ও কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব।”
সামাজিক ও শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব
এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে সমালোচনা ও দাবি আরও জোরদার হয়েছে। শিক্ষকদের এই পদক্ষেপ সামাজিক সচেতনতা তৈরি করেছে এবং সরকারের প্রতি তাদের দাবিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে।
সারাদেশের শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল প্রভাবিত হচ্ছে। এই আন্দোলন শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করতে এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য জাতীয়করণের নিশ্চয়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ এক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
MAH – 12295 , Signalbd.com