অর্থনীতি

মে থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের হুমকি, লোকসানে ধুঁকছে প্রান্তিক খামারিরা

আগামী মে মাস থেকে দেশের প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) জানিয়েছে, বাজারে দাম নির্ধারণে করপোরেটদের একচেটিয়া আধিপত্য, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরবতা, এবং ভয়াবহ লোকসানের কারণে তারা এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

সরকার কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন চলবে

সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন,

“যতক্ষণ না সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ততক্ষণ আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।”

তিনি দাবি করেন, প্রান্তিক খামারিরা এখন এমন চাপে পড়েছে যে প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একসময় দেশের অন্যতম কর্মসংস্থান ও পুষ্টির যোগানদাতা এই খাত আজ ধ্বংসের মুখে

দুই মাসে ১,২৬০ কোটি টাকার লোকসান

বিপিএ’র হিসাবে, গত দুই মাসে খামারিরা ডিম ও মুরগি খাতে প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার লোকসান গুনেছেন।

  • প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদনের বিপরীতে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা করে লোকসান
    এক মাসে লোকসান: প্রায় ৯০০ কোটি টাকা
  • দৈনিক ৪ কোটি ডিমের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন করেন ৩ কোটি ডিম
    প্রতি ডিমে ২ টাকা করে লোকসান
    দুই মাসে ডিম খাতে লোকসান: ৩৬০ কোটি টাকা

এই আর্থিক ক্ষতির দায় হিসেবে খামারিরা করপোরেট কোম্পানিগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের নীরবতাকে দায়ী করেছেন।

করপোরেটদের বিরুদ্ধে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ

বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়,

“সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নীরবতায় কিছু করপোরেট কোম্পানি পুরো পোলট্রি শিল্প দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা শুধু ফিড, বাচ্চা ও ওষুধ নয়—ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে।”

  • ঈদের আগে বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮–৩০ টাকা হলেও করপোরেট কোম্পানিগুলো সেটি বিক্রি করেছে ৭০–৮০ টাকায়।
  • এখন সেই একই বাচ্চা ৩০–৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০–১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে উৎপাদন খরচ ১৬০–১৭০ টাকা
    ⇒ এর পুরো ক্ষতি খামারিদের বহন করতে হচ্ছে

ডিমেও ভয়াবহ লোকসান

ডিমের উৎপাদন খরচ ১০–১০.৫০ টাকা হলেও বাজারে সেটি বিক্রি হচ্ছে ৮–৮.৫০ টাকায়। খামারিরা বলছেন,

“বাজার মূলত করপোরেটদের হাতে। তারা দাম নির্ধারণ করে, আর খামারিদের বাধ্য করা হয় মানতে।”

পোলট্রি খাতের অস্তিত্ব সংকটে

বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্প একসময় পুষ্টি, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল। কিন্তু বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ায় প্রান্তিক খামারিরা এখন ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন

বিপিএ বলছে, তারা শুধু ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থেমে থাকবে না। মে মাস থেকে খামার বন্ধ রেখে ডিম ও মুরগি উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধের কর্মসূচি তারা হাতে নিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button