অর্থনীতি

চিনি, তেল, ছোলাসহ রোজার ৯ পণ্যের আমদানি বেড়েছে

রমজান মাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চিনি, খেজুর, ছোলা, সয়াবিন তেলসহ নয়টি পণ্য আমদানিতে গড়ে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই বৃদ্ধি দেশের বাজারে সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

নয়টি পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা বিবেচনায় ভোগ্যপণ্যগুলোর আমদানি আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • চিনি – ২০% বৃদ্ধি
  • সয়াবিন তেল – ৩৪% বৃদ্ধি
  • ছোলা – ৬৪% বৃদ্ধি
  • খেজুর – ২৩% বৃদ্ধি
  • ডাল – ৪৪% বৃদ্ধি
  • মটর ডাল – ৮৫% বৃদ্ধি
  • পেঁয়াজ – ২% বৃদ্ধি
  • রসুন – ২০% বৃদ্ধি
  • আদা – ৫৬% বৃদ্ধি

এই বৃদ্ধি দেশের খাদ্য সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

আমদানি বৃদ্ধির কারণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ জমার হার নির্ধারণ এবং বিলম্বিত আমদানি বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের আমদানি আগ্রহ বেড়েছে। গত ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে বিলম্বিত বিল পরিশোধের অনুমতি দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর পাশাপাশি, গত ৬ নভেম্বর ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শূন্য মার্জিনেও আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষণ ও বাজার পরিস্থিতি

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আমদানি বৃদ্ধির ফলে রমজানের সময় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে এবং মূল্য স্থিতিশীল থাকবে। সাধারণত রমজান মাসে এসব পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বাজারে চাপ পড়ে। তবে আগাম আমদানির ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকবে এবং অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা কমবে।

চিনি ও তেলের পরিস্থিতি: গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। একই সময়ে সয়াবিন তেলের আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৯৮ হাজার ২৫২ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।

ডাল ও ছোলার চাহিদা: বাংলাদেশে ছোলা ও ডালের চাহিদা রমজানে বহুগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে ছোলা আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেড়ে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে। মটর ডালের আমদানি বেড়েছে ৮৫ শতাংশ, যা চার মাসে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে।

খেজুর ও অন্যান্য পণ্য: রমজানে খেজুরের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এবছর খেজুরের আমদানি ২৩ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা ও সরকার কর্তৃক সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে আমদানি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, রমজানের সময় মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলাদেশ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমাদের আমদানির সক্ষমতা বেড়েছে, কারণ সরকার শূন্য মার্জিন সুবিধাসহ বিভিন্ন সহজ শর্তে আমদানি অনুমোদন দিয়েছে। এতে করে রমজানের সময় বাজারে পণ্যের সংকট হবে না।’

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমদানি বৃদ্ধির ফলে আগামী কয়েক মাসে বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে এবং ভোক্তারা স্বস্তি পাবে। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারের পরিবর্তন এবং ডলার বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে আমদানিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে সরকারকে বাজার তদারকি এবং আমদানি নীতি আরও সুসংহত রাখতে হবে।

উপসংহার

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, রমজানের আগে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ এবং আগাম আমদানির ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button