আঞ্চলিক

খাদ্য বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে দুই ভাই-বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার মামুদপুর গ্রামে খাবারে বিষক্রিয়ায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। তিন দিন আগের একটি ভাঙা কাঁঠাল খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে একই পরিবারের দুই শিশুসন্তান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।

কীভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক মৃত্যু

বুধবার দুপুরে মামুদপুর বিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হকের দুই সন্তান বাকি বিল্লাহ (৫) ও আছিয়া খাতুন (৪) পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভাঙা কাঁঠাল ও মুড়ি খায়।

খাবার গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুরা বমি করতে শুরু করে এবং দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা গুরুতর হলে তাদের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাদের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয়, তবে পরিবারের সদস্যরা আগেই লাশ দাফন সম্পন্ন করেন। এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

কীভাবে খাবারে বিষক্রিয়া হতে পারে

বাংলাদেশে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ফলমূল খাওয়ার কারণে খাদ্য বিষক্রিয়ার ঘটনা দেখা যায়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা বা কেটে রাখা ফলে ব্যাকটেরিয়া জমে যায়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

কাঁঠালের মতো নরম ফল তিন দিন ধরে খোলা অবস্থায় থাকলে তা সহজেই বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয়, তবে সেই ফল খাওয়ার ফলে শরীর দ্রুত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া: শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে

একই পরিবারের দুটি শিশুর মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। প্রতিবেশীরা জানান, বাকি বিল্লাহ ও আছিয়া ছিলো খুব চঞ্চল ও প্রিয় মুখ। হঠাৎ এভাবে তাদের চলে যাওয়া যেন কেউ মেনে নিতে পারছে না।

মাগরিবের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে ভাই-বোনের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফনের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যসহ আশপাশের মানুষ।

চিকিৎসকের মত: সতর্ক না হলে বাড়তে পারে এমন ঘটনা

এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“পচা বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত খাবার খাওয়ার পর যদি দ্রুত চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তাহলে বিষক্রিয়া শিশুর প্রাণঘাতী হতে পারে।”

তিনি আরও জানান, কাঁঠাল, আমসহ যেকোনো ফল কেটে রাখার পর বেশি সময় খোলা রাখা উচিত নয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

খাদ্য নিরাপত্তা ও জনসচেতনতার অভাব

এই ঘটনার পেছনে একটি বড় কারণ হলো খাদ্য নিরাপত্তা ও সাধারণ জনগণের সচেতনতার অভাব। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামে সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট ফল খাওয়া হয়ে থাকে।
এছাড়া অনেকেই বুঝতে পারেন না কোন খাবার খাওয়ার উপযুক্ত আর কোনটি নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পর্যায় থেকে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচার চালানো দরকার, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের খাদ্যবিষয়ক প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি।

অকাল মৃত্যু রোধে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ

বেলকুচিতে দুই শিশুর মৃত্যু একটি কষ্টকর উদাহরণ হয়ে থাকল। কেবল একটি অসতর্ক মুহূর্ত—একটি পুরনো ফল—নিয়ে নিল দুটি নিষ্পাপ প্রাণ।

ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য পরিবার, সমাজ, প্রশাসন—সবারই এগিয়ে আসতে হবে। সময়মতো সচেতনতা এবং খাদ্য সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা কি আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করতে পারছি?

এম আর এম – ০৩৮২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button