বাংলাদেশ

নুরকে বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, নুরের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত এবং দেশের ভেতরেই তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে চিকিৎসার ফলোআপের জন্য দেশের বাইরে নেওয়া হবে কি না, তা নুরের পরিবারই সিদ্ধান্ত নেবে।

হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “নুরকে দেশের বাইরে নেওয়া এখন প্রয়োজন নেই। তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। তবে ফলোআপের চিকিৎসা বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য তিনি যদি দেশে বাইরে যেতে চান, তা তার পরিবারের সিদ্ধান্তের বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “নুরের সুস্থতার জন্য তার নেতাকর্মীরা অযথা কেবিনে ভিড় করবেন না। তাঁকে বিশ্রাম নেওয়া এবং চিকিৎসা অনুযায়ী চলার সুযোগ দেওয়া উচিত।”

নুরের বর্তমান শারীরিক অবস্থা

ঢামেক পরিচালক জানিয়েছেন, নুরের নাক ও চোয়ালের ভাঙা হাড় পুরোপুরি ঠিক হতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে। চোখের মধ্যে জমাট রক্ত নিরাময় হতে ১ থেকে ২ সপ্তাহ লাগতে পারে। নরমাল খাবার খাওয়া শুরু করা হয়েছে, তবে তিনি এখনও খাবার খেতে কিছুটা ব্যথা অনুভব করছেন।

“বিভাগীয় প্রধানরা সার্বক্ষণিকভাবে নুরের অবস্থা দেখছেন। ধীরে ধীরে সব ব্যথা কমবে এবং শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হবে,” বলেন হাসপাতাল পরিচালক।

ঘটনা

গত ৩০ আগস্ট রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষের সময় আল রাজী টাওয়ারের সামনে নুর গুরুতর আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে তার নাক, চোয়াল এবং চোখে আঘাত লাগে। আহত অবস্থায় প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে রাতেই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অন্তর্বর্তী সরকারসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফোন করে নুরের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন।

চিকিৎসা এবং ফলোআপের পরিকল্পনা

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে নুরের চিকিৎসা দেশের ভেতরে সম্পূর্ণ সম্ভব। তবে তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পরবর্তী ধাপগুলো তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আহত ব্যক্তির শারীরিক পুনরুদ্ধার ধীরে ধীরে হবে এবং দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা উপলব্ধ।

নুরের চিকিৎসা বিভাগের প্রধানরা বলেন, “চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নুর নিয়মিত ফলোআপে আসছেন এবং তার অবস্থা ক্রমেই উন্নতি করছে।”

রাজনৈতিক প্রভাব

নুরের আহত হওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। এছাড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, যার কারণে হাসপাতালে অযথা ভিড় হতে পারে। হাসপাতাল পরিচালক তাই নেতাকর্মীদের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নুরের বিদেশে নেওয়া এখন কোনো জরুরি প্রয়োজন নয়। দেশের ভেতরেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ফলোআপ সম্ভব। তবে দীর্ঘমেয়াদি ফলোআপ বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, আহত ব্যক্তি শারীরিকভাবে স্থিতিশীল হলে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন কমে যায়।

পরিশেষে

ঢামেক পরিচালক স্পষ্ট করেছেন, নুরকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নুরের পরিবারের উপর নির্ভর করবে। বর্তমানে তিনি ঝুঁকিমুক্ত এবং দেশের ভেতরেই তার চিকিৎসা কার্যকর। শারীরিক পুনর্বাসন ধাপে ধাপে হচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের জন্য হাসপাতালে অযথা ভিড় এড়িয়ে চলা জরুরি। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ঘটনা এখনও আলোচনার বিষয়।

এম আর এম – ১১৭৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button