আঞ্চলিক

মাকে বর্বর নির্যাতন, ভিডিও ভাইরালের পর ছেলে-পুত্রবধূসহ গ্রেফতার ৫

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাঁপানিয়া রামচন্দ্রপুর গ্রামে ঘটেছে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ৭৫ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধা মা মালেকা খাতুনকে বর্বরভাবে নির্যাতনের অভিযোগে তার ছেলে এবং পুত্রবধূসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এলাকাবাসী ফুঁসে ওঠে এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।

বৃদ্ধা মা বর্তমানে সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। স্থানীয়রা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন।

নির্যাতনের ঘটনা ও গ্রেফতার

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে পুত্রবধূ সোনালী খাতুন বৃদ্ধা মাকে মারধর করতে থাকে। তার সাথে যোগ দেন ছেলে নজরুল ইসলাম। তারা বৃদ্ধাকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরেন এবং মারপিট চালান।

ভিডিওতে দেখা গেছে, বৃদ্ধা হুমকির মুখে রয়েছেন এবং শারীরিকভাবে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ঘটনা সংক্রান্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন:

  • নজরুল ইসলাম (৪৫), বৃদ্ধার ছেলে
  • সোনালী খাতুন (৪০), পুত্রবধূ
  • মনিরুজ্জামান (৪২), ছেলে শ্যালক
  • ফরিদা খাতুন (৩৮), শ্যালিকা
  • মুরশিদা খাতুন (৩৬), পরিবারের অন্য সদস্য

পুলিশ জানায়, মামলার পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

শিকার বৃদ্ধার অবস্থা

চিকিৎসক জানিয়েছেন, বৃদ্ধা প্রথমে কথা বলতে পারছিলেন না। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পরিবার ও এলাকার লোকজন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

শিকার বৃদ্ধার মেয়ে আম্বিয়া খাতুন বাদি হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার প্রেক্ষাপট

স্থানীয়রা জানান, মালেকা খাতুন ২০০০ সাল থেকে মানসিক রোগে ভুগছেন। তার আচরণ নিয়ন্ত্রণে না থাকায় পরিবারে প্রায়ই অশান্তি দেখা যেত। সম্প্রতি বৃদ্ধা তার পুত্রবধূকে গালমন্দ করার ঘটনা ঘটায়।

পুত্রবধূ সোনালী খাতুন এবং ছেলে নজরুল ইসলাম এই ক্ষোভের জবাবে শারীরিক নির্যাতন চালান। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এতে যুক্ত ছিলেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ভিডিও ভাইরাল হবার পর এলাকাবাসী নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোকজন ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছেন এবং এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসনও ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আইনগত ব্যবস্থা 

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা এখন আদালতের কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ গঠনের পর তারা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানসিক অসুস্থতা থাকা বৃদ্ধাদের প্রতি পরিবারের দায়িত্ব ও যত্ন অপরিহার্য। পাশাপাশি, এ ধরনের নৃশংস ঘটনার ক্ষেত্রে সামাজিক ও আইনি ব্যবস্থা দ্রুত প্রয়োগ করা জরুরি।

সারসংক্ষেপ  

বৃদ্ধা ও মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের প্রতি সম্মান ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিবার এবং সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং দোষীদের শাস্তি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এম আর এম – ১১২৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button