এবার চাঁদা দাবির অভিযোগে পুলিশ সদস্য ধরা

পঞ্চগড়ে অভিযানের নামে স্থানীয় কিশোরদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে এক পুলিশ সদস্য ও তার সহযোগীকে হাতেনাতে আটক করেছে জনতা। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঘটনার মূল বিবরণ
পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া গ্রামে শনিবার (১২ জুলাই) রাতে এক অস্বাভাবিক ঘটনার সাক্ষী হয় স্থানীয়রা। অভিযানের নাম করে গ্রামে প্রবেশ করে এক প্রকৃত ও এক ভুয়া পুলিশ সদস্য। তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয়ে কিশোরদের বিরুদ্ধে জুয়া খেলার মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবি করে। একপর্যায়ে এক কিশোরকে হাতকড়া পরিয়ে ভয় দেখানো হয়।
তবে তাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে দুইজনকে আটক করে এবং পঞ্চগড় আর্মি ক্যাম্প ও সদর থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যায়।
আটককৃতদের পরিচয় ও পরিচয় প্রতারণা
আটক হওয়া প্রকৃত পুলিশ সদস্য হলেন কনস্টেবল মিজানুর রহমান (২৬), যিনি পঞ্চগড় সদর থানায় কর্মরত। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামে। মিজান নিজেকে এসআই হিসেবে পরিচয় দেন।
তার সহযোগী শরিফুল ইসলাম (৩০) নিজেকে ডিবি পুলিশের কনস্টেবল বলে দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন ভুয়া পুলিশ সদস্য। শরিফুল পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের পেলকুজোত এলাকার বাসিন্দা।
কিশোরদের ওপর চাঁদা দাবির অভিযোগ
ঘটনার রাত ১১টার দিকে এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানান, তার বাড়ির পাশে তিন কিশোর মোবাইল ব্যবহার করছিল। সেই সময়ে মিজান ও শরিফুল সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের পুলিশ পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ তোলে।
তারা এক কিশোরকে হাতকড়া পরিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিশোরের চিৎকারে তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে দুই প্রতারককে আটক করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ
পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “অভিযুক্ত কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, পুলিশের পোশাক বা পরিচয়কে ব্যবহার করে কেউ যদি এমন অনৈতিক কাজে জড়িত হয়, তবে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ বাহিনী নিজেদের স্বচ্ছতা ও জনসেবার মান ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, নতুন কিছু নয়?
দেশে মাঝে মাঝেই পুলিশের পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে আসে। কখনো প্রকৃত পুলিশ সদস্যরা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, আবার কখনো কিছু প্রতারক পুলিশের পোশাক ও পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের দুর্বলতা কাজে লাগায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুলিশের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে এমন প্রতারণামূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
জনমনে ক্ষোভ ও প্রশ্ন
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— যদি পুলিশ সদস্যরাই আইন ভাঙেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় নিরাপত্তা খুঁজবে?
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা পুলিশকে বিশ্বাস করি বলে তাদের সাহায্য নেই। কিন্তু যদি তারাই চাঁদা আদায়ে লিপ্ত থাকে, তবে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
ভবিষ্যতের করণীয়
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশের ভেতরে নিয়মিত মনিটরিং ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করে এমন প্রতারণার ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় শেখাতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রশাসনের ভূমিকা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
“পুলিশ বাহিনীতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না”—মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী, পুলিশ সুপার, পঞ্চগড়।
সারসংক্ষেপ
চাঁদা দাবির ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সময়োপযোগী সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতাই জনগণের আস্থা ফেরাতে পারে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়— ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে তো?
এম আর এম – ০৩২৬, Signalbd.com