বাংলাদেশ

নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা পুনর্বহাল করা হয়েছে : ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফিরিয়ে আনা হয়েছে ‘না’ ভোটের বিধান, বাতিল করা হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সব বিধান, আর পুনর্বহাল করা হয়েছে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা। কমিশনের মতে, এই সিদ্ধান্তগুলো ভোটের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে।

ঘোষণার বিস্তারিত

রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সোমবার (১১ আগস্ট) কমিশনের মুলতবি বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনে যদি অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তাহলে একটি কেন্দ্র থেকে শুরু করে পুরো আসনের ফলাফল পর্যন্ত বাতিল করার ক্ষমতা এখন আবারও ইসির হাতে থাকবে।

ইসি সানাউল্লাহ জানান, “আমরা মনে করি ভোটের সততা নিশ্চিত করতে এই ক্ষমতা অপরিহার্য। এর ফলে যদি অনিয়ম হয়, সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।”

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার ‘না’ ভোট চালু হয়েছিল। তখন ভোটাররা যদি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না করেন, তারা ‘না’ ভোট দিয়ে সেই অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারতেন। পরে এই বিধান বাতিল করা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর, আসন্ন নির্বাচনে আবারও সেই সুযোগ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এছাড়া, ২০১৮ ও ২০২৩ সালের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান ছিল, যা এবার সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিশনের মতে, প্রযুক্তিগত জটিলতা এবং আস্থার সংকট এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ।

নতুন বিধানের প্রভাব

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো আসনে প্রার্থী একজন হলেও তাকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদি ‘না’ ভোট বেশি হয়, তাহলে সেখানে পুনঃনির্বাচন হবে। এর ফলে একক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এছাড়া, ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা ফেরত আসায় ভোটে অনিয়ম করলে প্রার্থীদের জন্য ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ভোটকেন্দ্রে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত পরিবর্তন

ইসি জানিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করার ক্ষমতাও কমিশনের হাতে থাকবে। আগে কেবল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হলে এই ক্ষমতা কার্যকর হতো। এখন থেকে মাঝারি পর্যায়ের অপরাধ বা কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও সেই দলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

বর্তমানে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ২২টি নতুন রাজনৈতিক দল প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত শেষে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

গণমাধ্যমের ভূমিকা

নতুন বিধান অনুযায়ী, ভোট গণনার সময় সাংবাদিকরা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে একবার গণনা শুরু হলে তারা মাঝপথে বেরিয়ে যেতে পারবেন না। কমিশনের দাবি, এই নীতি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং ভুল বোঝাবুঝি এড়াবে।

বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো ভোটের স্বচ্ছতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিশেষ করে ‘না’ ভোট প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে পরিচালনা করা এবং ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নিরপেক্ষভাবে ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

শেষ কথা 

নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্তগুলো ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এসব পরিবর্তন কতটা সফলভাবে কার্যকর হয় এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ওপর।

এম আর এম – ০৮০৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button