যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে সুবিধা চায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এ শিল্পে তুলার চাহিদা বিপুল। বর্তমানে দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতের জন্য তুলা মূলত আমদানি করা হয় ভারত, আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি নিয়ে ব্যবসায়ীরা নতুন সুযোগ-সুবিধা চাচ্ছেন। কারণ, মার্কিন তুলার দাম তুলনামূলক বেশি এবং পরিবহন সময় দীর্ঘ হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার দাবি উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর ২০% পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এর আগে সরকারের প্রতিনিধি দল এবং বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ওয়াশিংটনে গিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার পর আংশিক শুল্ক হ্রাস হলেও পুরোপুরি সমস্যা সমাধান হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার জন্য তুলা আমদানির অঙ্গীকার করেন।
বড় অঙ্গীকার: বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এবং এর আওতাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানির জন্য সমঝোতা চুক্তি করেছে। এর মধ্যে—
- সালমা গ্রুপ: মার্কিন কার্গিল ইনকরপোরেটের সঙ্গে ১ কোটি ২০ লাখ ডলারে ৬ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি।
- এশিয়া কম্পোজিট মিলস: সমপরিমাণ চুক্তি করেছে।
- মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস: লুইস ড্রেফুস গ্রুপের কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ৭ হাজার টন তুলা আমদানির চুক্তি করেছে। পরে আরও ৩ হাজার টন যুক্ত করে চুক্তি বাড়ানো হয়।
সব মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সমঝোতা হয়েছে, যা বাংলাদেশের তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ।
চ্যালেঞ্জ: দাম বেশি ও পরিবহন সময় দীর্ঘ
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মার্কিন তুলার দাম আফ্রিকান বা ভারতীয় তুলার চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাউন্ড তুলার দাম বর্তমানে ৮৭-৮৮ সেন্ট, যেখানে আফ্রিকার কিছু দেশে দাম ৭৮-৮৩ সেন্ট। তাছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমুদ্রপথে তুলা আনতে ২ থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। এতে খরচ বাড়ে এবং উৎপাদন চেইনে দেরি হয়।
ব্যবসায়ীদের দাবি: সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা
তুলা আমদানিতে বিলম্বের প্রধান কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা প্রণোদনার অভাবকে দায়ী করছেন। আগে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে প্রতিষ্ঠানপ্রতি ৩ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেত, এখন তা কমে ২ কোটি ডলার হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণের সুদহার ১.৮% থেকে বেড়ে ৬.৫% হয়েছে। উদ্যোক্তারা চাইছেন:
- ইডিএফ থেকে ১% সুদে ঋণ সুবিধা।
- ঋণের সীমা বাড়ানো।
- মার্কিন তুলার জন্য বিশেষ ওয়্যারহাউস সুবিধা।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য
বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জানিয়েছেন, “আমরা সরকারকে লিখিত প্রস্তাব দেব। ডলার রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি বাড়াতে হবে, আর তুলা আমদানিই সেই পথে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।”
মোশাররফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের এমডি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা বিলম্ব করছি শুধু সুবিধার জন্য নয়। তবে সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও অনেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে আগ্রহী হবেন।”
সরকারের সম্ভাব্য উদ্যোগ
সরকার ইতিমধ্যেই ওয়্যারহাউস তৈরি ও লজিস্টিক সুবিধার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে তুলা আমদানির সময় কমবে এবং উদ্যোক্তারা দ্রুত তুলা পাবে। এছাড়া, ডলার ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- মার্কিন তুলা বিশ্বমানের হিসেবে স্বীকৃত।
- উচ্চমানের সুতা তৈরিতে উপযুক্ত।
- রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন তুলা ব্যবহার করে তৈরি পোশাকের গুণমান বাড়লে রপ্তানি বাড়তে পারে। তবে এজন্য সরকারকে অর্থনৈতিক সুবিধা, ঋণ, শুল্ক ছাড় এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। যদি এসব বাস্তবায়ন হয়, তবে বাংলাদেশ বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সঠিক নীতি, আর্থিক প্রণোদনা এবং দ্রুত সিদ্ধান্তই হতে পারে এই খাতের ভবিষ্যৎ সাফল্যের চাবিকাঠি।
MAH – 12540 , Signalbd.com