মানুষের মস্তিষ্কের চেয়েও শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি করতে চায় মেটা

মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতার চেয়েও অধিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কৃত্রিম প্রযুক্তি—‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’—তৈরির লক্ষ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে চায় মেটা। প্রতিষ্ঠানটি এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI) উন্নয়নে একাধিক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে মেটা একদিকে যেমন বিলিয়ন ডলারের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে স্কেল এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্দ্র ওয়াংয়ের প্রতি।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে প্রতিযোগিতা দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। ঠিক এমন সময় মেটা ঘোষণা দিল সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরির মহাযাত্রার। প্রতিষ্ঠানটি ক্যালিফোর্নিয়ায় সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন একটি এআই গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে ব্যবহৃত হবে নতুন প্রজন্মের চিপ, মডেল ট্রেনিং সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক স্থাপনা।
মার্ক জাকারবার্গের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। ২০১৩ সালে গুগলের অধীনস্থ ডিপমাইন্ড অধিগ্রহণে ব্যর্থ হওয়ার পর জাকারবার্গ মেটার নিজস্ব এআই গবেষণাগার স্থাপন করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গবেষণার পথচলা।
বর্তমানে মেটার এআই গবেষণার নেতৃত্বে আছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ২০১৮ সালের টুরিং পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন। তিনি ‘নিউরাল নেটওয়ার্ক’ পদ্ধতির অন্যতম অগ্রপথিক হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। ইয়ান লেকুন মনে করেন, সাধারণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃত্রিম প্রযুক্তি বা এজিআই (Artificial General Intelligence) তৈরি করতে হলে প্রচলিত প্রযুক্তির সীমা ছাড়িয়ে যেতে হবে এবং নির্মাণ করতে হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কাঠামো ও ধারণা।
মেটা ইতোমধ্যে বিভিন্ন এআই-নির্ভর পণ্য বাজারে এনেছে। ‘মেটা এআই’ নামের একটি চ্যাটবট বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং রে-ব্যান স্মার্ট চশমার মতো পণ্যগুলোতে। গত মে মাসে এক ঘোষণায় জাকারবার্গ বলেন, প্রতি মাসে একশ’ কোটির বেশি ব্যবহারকারী মেটা এআই ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ চ্যাটবট থেকে সুপার ইন্টেলিজেন্সের দিকে যাত্রা মোটেও সহজ নয়। এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অপ্রতিম ডেটা সংগ্রহ, ব্যাপক কম্পিউটিং ক্ষমতা এবং বিপুল বিনিয়োগ। সেই প্রেক্ষিতে মেটা স্কেল এআইয়ের সহযোগিতায় একটি অত্যাধুনিক গবেষণা পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা করেছে।
স্কেল এআই প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে আলেক্সান্দ্র ওয়াং ও লুসি গুওর নেতৃত্বে। তবে প্রতিষ্ঠান শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই লুসি গুওকে বরখাস্ত করা হয়। প্রথমদিকে স্কেল এআই মূলত ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, কোহিয়ারসহ কিছু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও স্টার্টআপকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে সহায়তা করত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি এবং বেসরকারি করপোরেট সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং অবকাঠামো সম্পর্কিত সংস্থার সঙ্গেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এর ব্যবহারিক প্রভাব ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ওপর। সুপার ইন্টেলিজেন্স তৈরি করা যেমন চমৎকার এক প্রযুক্তিগত অর্জন হতে পারে, তেমনি তা হতে পারে নিয়ন্ত্রণহীন এক ঝুঁকিও। ফলে প্রযুক্তি গবেষণার সঙ্গে সঙ্গেই দরকার এর নৈতিক, সামাজিক ও আইনগত দিকনির্দেশনা।
মেটার এই উদ্যোগ প্রযুক্তি জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই যাত্রা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে মেটা পুরো দমে প্রস্তুতি নিচ্ছে।