আঞ্চলিক

সিরাজদিখানে আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে গুলি করল দুর্বৃত্তরা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রকাশ্যে দিনের বেলায় গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন জুনায়েত সর্দার (২৩) নামের এক আবাসন প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের চরবিশ্বনাথ গ্রামের একটি সেতুর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলে আসা তিনজন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি ছোড়ে।

আহত কর্মকর্তার পরিচয় ও পারিবারিক তথ্য

আহত জুনায়েত সর্দার সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকার বিক্রমপুর মডেল টাউন আবাসন প্রকল্পের সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। তাঁর গ্রামের বাড়ি লৌহজং উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ছাপরি মসজিদ এলাকায়। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় তিনি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, জুনায়েতের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না।

কীভাবে ঘটলো এই হামলা

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুনায়েত ঢাকার বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অফিস থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে নামার পরই মোটরসাইকেলযোগে তিনজন দুর্বৃত্ত তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। দুর্বৃত্তরা কাছ থেকে টানা তিন রাউন্ড গুলি করে। একটি গুলি তার ডান পায়ে, আরেকটি কোমরে এবং অপর একটি পাশের একটি ভ্যানে গিয়ে লাগে। স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয়দের ভূমিকা ও তাৎক্ষণিক উদ্ধার

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জুনায়েত। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নিমতলা আইডিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা

ঘটনার সময় এক ভ্যানচালক ঘটনাস্থলে ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “হঠাৎ মোটরসাইকেল থেকে তিনজন লোক এসে ওই ছেলেটির দিকে গুলি ছুড়ে। আমার ভ্যানেও একটি গুলি লাগে। পরে আমরা কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” তার বক্তব্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বক্তব্য

আবাসন প্রকল্প বিক্রমপুর মডেল টাউনের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ হোসেন বলেন, “সকালে অফিসে থাকাকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি, আমাদের সুপারভাইজারকে গুলি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঢাকা থেকে আসার সময় থেকেই তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল।”

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মালেক জানান, “আমার জানা মতে, জুনায়েতের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি। তাই কেন এমন হামলা হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করলে স্পষ্ট হবে।”

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “ঘটনার পেছনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

এলাকায় এর আগে এমন ঘটনা

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাসে সিরাজদিখান উপজেলায় একাধিকবার প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আবাসন প্রকল্প ঘিরে বিভিন্ন সময় দখল ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিবারই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, তবু এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি স্থানীয়দের আতঙ্কে রেখেছে।

স্থানীয়দের আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনের আলোতে এভাবে সশস্ত্র হামলা চালানো নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ব্যর্থতা। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ভবিষ্যৎ তদন্ত ও আইনের কঠোর ব্যবস্থা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মিলিয়ে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ বলছে, শিগগিরই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

সারসংক্ষেপ  

দিনের বেলায় প্রকাশ্যে গুলি চালানোর এ ঘটনা স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত করেছে। ভুক্তভোগী জুনায়েতের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলেও চিকিৎসকরা আশাবাদী। তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকেও এমন হামলা কীভাবে ঘটতে পারে। পুলিশ যদি দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এম আর এম – ১০৪৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button