বিনোদন

মেঘনা আলমের ল্যাপটপ, মোবাইলে রাষ্ট্রবিরোধী তদন্ত নির্দেশ

ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজি মামলায় নতুন মোড়

ঢাকার ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার মডেল মেঘনা আলমের জব্দ করা মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো তথ্য বা উপাদান আছে কি না, তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম। একই সঙ্গে মেঘনার পাসপোর্ট, ম্যাকবুকসহ অন্যান্য আইটি সরঞ্জামের মালিকানা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মডেল মেঘনা আলম কার?

মডেল মেঘনা আলম বাংলাদেশের নামকরা মডেল ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও মামলা নিয়ে তিনি দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।

অভিযোগ ও মামলা সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মডেল মেঘনা আলম এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেওয়ান সমির ও কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সুন্দরী নারীদের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনী ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৫০ লাখ টাকার বেশি চাঁদা আদায় করতেন। এছাড়া, তারা এই টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতেন বলে মামলায় উল্লেখ আছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য, যারা জাপানি রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য স্থানে বৈঠক করে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে চাঁদাবাজির পরিকল্পনা করতেন।

গ্রেপ্তার ও তদন্তের বিস্তারিত

মেঘনা আলমকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় গত ৯ এপ্রিল, এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। ২৮ এপ্রিল তাকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। জামিনে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে।

২২ জুন তিনি আদালতে তার মালামাল — ম্যাকবুক, পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আজ সেই আবেদনের শুনানি হয়।

আদালতে মেঘনা আলমের বক্তব্য ও তর্ক

অদালতে উপস্থিত মেঘনা আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অনেক রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন এবং আমার কাছে তার প্রমাণ রয়েছে। আমি প্রমাণ দিতে পারব যে আমি প্রেমের ফাঁদে পড়েছি, আমি কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলিনি।’

রাষ্ট্রমুখী আইনজীবী এই দাবির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং তদন্তাধীন। মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে হবে মডেল মেঘনা আলম কাদের ব্ল্যাকমেল করতেন।’

মেঘনা আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। আমি ছয়টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।’

আদালতে উভয় পক্ষের মাঝে কয়েকবার তর্ক-বিতর্ক হয়। মেঘনা অভিযোগ করেন, ‘রাষ্ট্রদূতদের অসম্মান করা হচ্ছে।’

মামলার প্রেক্ষাপট ও আইনগত অবস্থান

মামলা অনুসারে, মেঘনা আলম ও তার সহযোগীরা ধানমন্ডির একটি জাপানি রেস্টুরেন্টে ২৯ মার্চ একটি বৈঠকে বিদেশি কূটনীতিক থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

মহিলা ও কূটনীতিকদের নিয়ে এমন ধরনের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ দেশের জন্য বিব্রতকর। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং তদন্ত শেষে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

মোবাইল ও ল্যাপটপে কী থাকতে পারে?

মামলার বিশেষত্ব হলো মডেল মেঘনার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান রয়েছে কিনা। এর মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে চাইছেন, মডেল মেঘনা কারো সাথে চক্রান্ত করে কি না, বিশেষ করে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার কোনো চেষ্টা হয়েছে কিনা।

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে এই মামলা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নাম জড়ানো এই অভিযোগ দেশীয় কূটনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

মডেল মেঘনা আলমের পেশাগত জীবন ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

মেঘনা আলম দীর্ঘদিন ধরেই মিডিয়া, মডেলিং ও আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। দেশের বাইরে তার পরিচিতি রয়েছে। সে কারণে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেশের মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

অনেকে মনে করেন, মেঘনা নিরপরাধ ও ষড়যন্ত্রের শিকার, আবার অনেকে বিশ্বাস করেন তদন্তের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে আসবে।

আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে?

তদন্ত শেষে আদালতে জমা দেয়া রিপোর্ট ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আগামী শুনানিতে মডেল মেঘনা আলমের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। ৩১ আগস্ট তার ওপর মামলার পরবর্তী পর্যায়ের শুনানি রয়েছে।

বিভিন্ন আইনজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মামলার তদন্তে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া দরকার, যাতে দেশের সুনাম রক্ষিত হয় এবং সত্য উদঘাটিত হয়।

সার্বিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা

মডেল মেঘনা আলমের মামলাটি বাংলাদেশের মিডিয়া, আইন, কূটনীতি ও সামাজিক জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলেছে।

  • আইনি দৃষ্টিকোণ: মামলা তদন্তাধীন, প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।
  • সামাজিক দৃষ্টিকোণ: মডেল ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নৈতিকতা, দায়িত্ব এবং তাদের কর্মকাণ্ডের সামাজিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
  • কূটনৈতিক প্রভাব: বিদেশি কূটনীতিকদের নাম সংশ্লিষ্ট হওয়ায় দেশের কূটনীতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

মডেল মেঘনা আলমের ল্যাপটপ ও মোবাইলে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তার পাসপোর্ট, ম্যাকবুকসহ অন্যান্য মালামাল ফেরত দেওয়ার আবেদন নিয়ে শুনানি হয়েছে। মামলাটি ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তদন্তাধীন রয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট শুনানি হবে। মেঘনা আলম এই মামলায় নিজের নিরপরাধিতা দাবি করেছেন।

 MAH – 12017, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button