রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে আলো আসলে শরীরে যে ধরনের প্রভাব পড়ে

অনেকেই ঘুমানোর সময় জানালা বা পর্দা খোলা রেখে দেন, যাতে বাইরের আলো মৃদুভাবে ঘরে প্রবেশ করে। কিন্তু এই অভ্যাস শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা অনেকেরই জানা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের কৃত্রিম আলো আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়ি বা সার্কাডিয়ান রিদমকে ব্যাহত করতে পারে। এই অভ্যন্তরীণ ঘড়ি শুধু ঘুম-জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং রক্তচাপ, রক্তের শর্করা এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
গবেষণার ফলাফল
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে কৃত্রিম আলোতে ঘুমান, তাদের মধ্যে হৃদযন্ত্রের রোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় ৮৮,৯০৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণ করেন। এক সপ্তাহ ধরে আলোর সংস্পর্শ মাপার সেন্সর ব্যবহার করা হয়। দশ বছরের ফলোআপে দেখা যায়, যারা বেশি আলোতে ঘুমান, তাদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিউর এবং অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বিশেষত নারীদের হার্ট ফেলিউর ও করোনারি আর্টারি ডিজিজে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং তরুণদের মধ্যে অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
কৃত্রিম আলো শরীরে কিভাবে প্রভাব ফেলে
রাস্তার বাতি, টিভি বা মোবাইল ফোনের আলো আমাদের সার্কাডিয়ান রিদমকে বিঘ্নিত করে। এটি রক্তে হরমোনের মাত্রা, ঘুমের গুণমান এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতে আলোতে ঘুমালে শরীরে হাইপারকোয়াগুলেবিলিটি তৈরি হতে পারে, অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস হৃদযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কম ঘুমের মান, অনিয়মিত রিদম এবং রাতের আলো মিলিয়ে শারীরিক চাপ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে হৃৎপিণ্ড এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, রাতের আলো স্বাস্থ্য ঝুঁকির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
সমাধানের উপায়
শরীরকে স্বাস্থ্যবান রাখতে এবং হৃৎযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে কয়েকটি সহজ অভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে।
- ঘুমানোর সময় পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার রাখা
- শোবার আগে মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপের ব্যবহার কমানো
- ঘরের বাতি বন্ধ বা ডিম করে রাখা
- স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- পর্যাপ্ত ও শান্ত ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করা
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাতে ঘরে আলো থাকলে শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দ ভেঙে যায়। তারা সতর্ক করেছেন, রাতে জানালার পর্দা টেনে রাখা এবং কৃত্রিম আলো থেকে দূরে থাকা জরুরি। এছাড়া ঘুমের পূর্বে স্থির পরিবেশ তৈরি করা এবং অতিরিক্ত আলো এড়িয়ে চলা দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
নতুন গবেষণার দিকনির্দেশনা
গবেষকরা আরও বলেছেন, যেসব লোক রাতে আলোতে ঘুমান, তাদের উপর বিশেষ মনিটরিং করা দরকার। বিশেষ করে যাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য রাতের আলো অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, রাতে অন্ধকারে ঘুমানো শরীরের প্রাকৃতিক ছন্দ বজায় রাখতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
রাতে ঘরে আলো থাকা শুধু ঘুমের মান কমায় না, বরং হৃদযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ঘুমের পরিবেশকে অন্ধকার ও শান্ত রাখা অপরিহার্য। ছোট অভ্যাসও দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১১৪১, Signalbd.com