২৫০ কোটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে থাকার খবর ‘ভুয়া’ – জানালো গুগল

সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে— “২৫০ কোটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট সাইবার হ্যাকারদের হাতে ঝুঁকিতে” এবং গুগল নাকি সব ব্যবহারকারীর জন্য জরুরি সতর্কবার্তা (Security Alert) জারি করেছে। এই খবর ভাইরাল হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জিমেইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।
কিন্তু গুগল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— এই খবর সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। গুগলের মতে, জিমেইল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী এবং কোনো ধরনের ব্যাপক নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।
তাহলে এই বিভ্রান্তির উৎস কোথায়? আসল ঘটনা কী ছিল? গুগল কী বলেছে? Signalbd.com-এর বিশেষ প্রতিবেদনে থাকছে পুরো বিশ্লেষণ।
বিভ্রান্তির শুরু: কোথা থেকে ছড়াল এই খবর?
কিছু টেকনোলজি পোর্টাল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয় যে, গুগল তার ২৫০ কোটিরও বেশি জিমেইল ব্যবহারকারীর জন্য জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছে, কারণ তাদের ক্লাউডভিত্তিক সার্ভারে ভয়াবহ নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়েছে।
এই গুজবের সঙ্গে যুক্ত করা হয় সেলসফোর্স (Salesforce) নামের একটি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে ঘটে যাওয়া ফিশিং আক্রমণের ঘটনা। বলা হয়, গুগলের কিছু সিস্টেমও এতে প্রভাবিত হয়েছে।
কিন্তু গুগল পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে— এই তথ্যগুলো ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং পুরনো ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা।
গুগলের অফিশিয়াল প্রতিক্রিয়া: “জিমেইল নিরাপদ, আতঙ্কের কারণ নেই”
গুগল তাদের অফিশিয়াল ব্লগ পোস্টে বলেছে—
“আমরা আমাদের ব্যবহারকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে জিমেইলের সুরক্ষা অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকর। সম্প্রতি যেসব গুজব ছড়িয়েছে যে আমরা নাকি বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছি— সেগুলো সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন।”
গুগল আরও জানায়:
- জিমেইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৯৯.৯৯% ফিশিং ও ম্যালওয়্যার আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম।
- সাম্প্রতিক কোনো নতুন হ্যাকিং বা ডেটা লিক হয়নি।
- যেসব ব্যবহারকারী পূর্বের কোনো ঘটনায় প্রভাবিত হয়েছিলেন, তাদের গত জুন এবং আগস্টে জানানো হয়েছে।
পুরনো ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা কেন হলো?
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভ্রান্তির সূত্র ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘটে যাওয়া একটি নিরাপত্তা ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা। তখন কিছু ফিশিং আক্রমণ হয়েছিল, যার প্রভাব সীমিত ছিল।
তখন গুগল সতর্কবার্তা জারি করেছিল প্রভাবিত ব্যবহারকারীদের জন্যই। কিন্তু পরে সেই তথ্যকে বাড়িয়ে বলা হয়, যেন সব জিমেইল ব্যবহারকারী বিপদে আছে।
গুগলের সাইবার সিকিউরিটি পরামর্শ
গুগল বলেছে, হ্যাকাররা সব সময় নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে। তাই সাইবার সিকিউরিটি অভ্যাস উন্নত করা জরুরি।
তাদের পরামর্শ:
পাসকি (Passkey) ব্যবহার করুন – এটি পাসওয়ার্ডের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু রাখুন।
শক্তিশালী, অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন – অন্য কোনো অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মিল না থাকে।
সন্দেহজনক ইমেইলে ক্লিক করবেন না।
গুগল অ্যাকাউন্টে সিকিউরিটি চেকআপ করুন।
সাইবার নিরাপত্তা হুমকি কেন বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিশিং আক্রমণ এবং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হ্যাকিংয়ের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য চুরি করা সবচেয়ে সহজ উপায়, তাই এ ধরনের আক্রমণ বাড়ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে:
- প্রতিদিন গুগল ১০০ মিলিয়নের বেশি ফিশিং ইমেইল ব্লক করে।
- ২০২৫ সালে সাইবার অপরাধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।
পূর্বে কি জিমেইল হ্যাক হয়েছিল?
২০১৪ সালে একবার জিমেইলের ৫০ লাখ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড লিক হয়েছিল, যা ইতিহাসে বড় ঘটনা হিসেবে ধরা হয়। এরপর গুগল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে।
এখন জিমেইল ব্যবহারকারীরা পাসকি ও বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে পারেন, যা পাসওয়ার্ড ছাড়াই লগইনের সুযোগ দেয়।
সত্যি কি জিমেইল ২৫০ কোটি অ্যাকাউন্ট ঝুঁকিতে?
না। গুগল পরিষ্কার জানিয়েছে,
– কোনো নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।
– সব জিমেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ।
– যারা পুরনো ঘটনায় প্রভাবিত হয়েছিল, তাদের আগে জানানো হয়েছে।
অতএব এই খবর সম্পূর্ণ ভুয়া এবং গুজব।
পাঠকদের জন্য করণীয়
এই ধরনের খবর বিশ্বাস করার আগে অফিশিয়াল সোর্স চেক করুন।
নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত সিকিউরিটি রিভিউ করুন।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখুন।
সম্ভব হলে পাসকি ব্যবহার শুরু করুন।
গুগলের বক্তব্য একটাই— জিমেইল নিরাপদ। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সচেতন থাকাই সর্বোত্তম সাইবার সিকিউরিটি।
MAH – 12611, Signalbd.com