সৌদিতে একদিনে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সৌদি আরবে একদিনেই আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। শনিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নাজরান অঞ্চলে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) তথ্যমতে, মাদক চোরাচালানের অভিযোগে সাতজন বিদেশি নাগরিক এবং হত্যার অভিযোগে একজন সৌদি নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
কারা এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকৃতদের মধ্যে ছিলেন
এসপিএ জানিয়েছে, যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজন সোমালির নাগরিক, তিনজন ইথিওপিয়ান নাগরিক এবং একজন সৌদি আরবের নাগরিক। বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ‘হাশিশ’ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর সৌদি নাগরিককে মায়ের হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
চলতি বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়ছে
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং সৌদি সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৩০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনকে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে রেকর্ড ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। চলতি বছরের গতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে এই সংখ্যা আগের বছরের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মাদকবিরোধী যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া সৌদি আরবের ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মূল কারণ। ২০২২ সালের আগে প্রায় তিন বছর মাদক সংক্রান্ত মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর করা বন্ধ ছিল। তবে ২০২২ সালের শেষ দিকে সৌদি সরকার আবারও এই সাজা কার্যকর করা শুরু করে। এর ফলে গত দুই বছরে শত শত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
এএফপির তথ্য অনুযায়ী, মাদক অপরাধের দায়ে ২০২২ সালে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০২৫ সালে এই সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৫৪ ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপপরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেছেন, “আমরা এক ভয়াবহ প্রবণতা লক্ষ্য করছি, যেখানে বিদেশিদের বিশেষ করে মাদক-সম্পর্কিত অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এই অপরাধগুলোর জন্য মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত নয়।”
তারা আরও বলছে, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিদেশিদের আইনি সহায়তার যথাযথ সুযোগ দেওয়া হয় না।
সৌদি সরকারের ব্যাখ্যা
তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য আলাদা। তারা বলছে, দেশটির আইনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। সরকারি বক্তব্যে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে জননিরাপত্তা রক্ষায় মৃত্যুদণ্ড প্রয়োজন। সব ধরনের আপিল প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই এই শাস্তি কার্যকর করা হয়।”
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বিশ্বে অন্যতম বেশি। বিশেষ করে মাদক-সম্পর্কিত অপরাধের ক্ষেত্রে এই শাস্তির হার ক্রমবর্ধমান। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, এই প্রবণতা চলতে থাকলে আসছে বছরগুলোতে আরও বেশি মানুষ মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সমালোচনা আরও তীব্র হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ড বাতিলের দাবি জোরদার হলেও সৌদি আরব সেই ধারা থেকে সরে এসে বরং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে এই প্রবণতা কীভাবে বদলাবে, তা নির্ভর করছে সৌদি সরকারের নীতি এবং আন্তর্জাতিক চাপের মাত্রার ওপর।
শেষ কথা
একদিনে আটজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার এই ঘটনা সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ড নীতির কড়াকড়ি এবং দ্রুততার প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক মহল থেকে সমালোচনা বাড়লেও দেশটির সরকার বলছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এ ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হলে এই ধরনের মৃত্যুদণ্ড দেশটির ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এম আর এম – ০৬৭৭, Signalbd.com