সিঙ্গাপুর ম্যাচে ফেবারিট বাংলাদেশ: নতুন প্রত্যাশায় ফুটবলপ্রেমীরা

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবলে যেন এক নতুন জোয়ার। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে ড্র করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া দলটি এখন মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের। ম্যাচটি আগামী ১০ জুন, ভেন্যু—ঢাকার ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম।
এই ম্যাচকে ঘিরে বাড়ছে উত্তেজনা, বাড়ছে প্রত্যাশা। বিশেষ করে হামজা চৌধুরীর মতো আন্তর্জাতিক মানের মিডফিল্ডারের আগমনে জাতীয় দল নতুন কৌশল ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। সাবেক তারকা ফুটবলাররা যেমন মনে করছেন, এই ম্যাচে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
হামজার আগমনে পাল্টে যাচ্ছে ফুটবল-ভাবনা
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরী ঢাকা পৌঁছানোর পর ক্লান্তি ঝেড়ে সোজা অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। সোমবার (২ জুন) বিকেলে জাতীয় স্টেডিয়ামে দলের অনুশীলনে দেখা গেছে তাকে প্রাণোচ্ছল। এ দৃশ্যই যেন বদলে দিচ্ছে দেশের ফুটবলচর্চার মানসিকতা।
ফুটবলবোদ্ধাদের মতে, হামজার অন্তর্ভুক্তি শুধু কৌশলগত নয়, মানসিকভাবেও গোটা দলকে উজ্জীবিত করেছে। তার অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও পেশাদারিত্ব থেকে পুরো দল শিখছে।
বাছাইপর্বের প্রথম রাউন্ডে সবারই সমান পয়েন্ট
২০২৭ সালের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ভারতের সঙ্গে ছিল গোলশূন্য ড্র। একইভাবে সিঙ্গাপুরও হংকংয়ের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে। ফলে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান—এক। সেক্ষেত্রে ১০ জুনের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জয়ী দলই গ্রুপে শীর্ষে উঠে যাবে।
সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা বনাম বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস
বিশ্ব র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৮৩তম স্থানে থাকলেও, ঘরের মাঠের সুবিধা এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন অনেকে।
জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি বলেন,
“সিঙ্গাপুর দলে কিছু অভিজ্ঞ ফুটবলার থাকলেও তারা বর্তমানে খুব একটা ছন্দে নেই। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, তাতে বোঝা যায় আমাদের দল ভালোভাবেই প্রস্তুত। ঘরের মাঠে খেলায় ৩ পয়েন্ট পাওয়ার খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”
ফাহামিদুল-রাকিব-আল আমিন: নতুন কম্বিনেশনের আশায় দল
৩১ মে থেকে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হয়েছে। অনুশীলনের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন ইতালিপ্রবাসী ফরোয়ার্ড ফাহামিদুল ইসলাম। তার সঙ্গে উইংয়ে রাকিব হোসেন ও আল আমিন থাকলে গঠন হতে পারে একটি প্রাণবন্ত আক্রমণভাগ।
এমিলির মতে,
“তিনজনই গোল করার সক্ষমতা রাখে। যদি তাদের স্বাভাবিক পজিশনে খেলানো হয়, তাহলে ফাহামিদুল-রাকিব-আল আমিনের কম্বিনেশন ম্যাচে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”
ভুটানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ: তরুণদের পরীক্ষা
সিঙ্গাপুরের আগে ৪ জুন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। এই প্রীতি ম্যাচটি তরুণ খেলোয়াড়দের সামর্থ্য যাচাই করার সুযোগ তৈরি করবে। জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক ও অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য মনে করেন, এ ম্যাচে শমিত শোম, হামজা চৌধুরী ও ফাহামিদুল ইসলাম—এই তিনজনকে একসঙ্গে দেখা গেলে দলের কৌশলগত শক্তি স্পষ্টভাবে বোঝা যেত।
তিনি বলেন,
“ফাহামিদুল যদি হামজার সঙ্গে মিডফিল্ড কম্বিনেশন গড়ে তোলে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী মিডফিল্ড হতে পারে এটি। আমাদের মধ্যমাঠ অনেক দিন পর এত ভারসাম্যপূর্ণ ও অভিজ্ঞ দেখাচ্ছে।”
নবজাগরণের বার্তা: আশাবাদী দর্শক-সমর্থকরা
৯০-এর দশকের ফুটবলের ঢেউ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিপ্লব বলেন,
“২০১০ সালের পর আমাদের ফুটবল বেশ খানিকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন হামজার মতো ফুটবলাররা আসায় আমরা আবার আশাবাদী হচ্ছি। দর্শকরা গ্যালারিতে ফিরছে। এই আশাটা ধরে রাখতে হলে আমাদের পজিটিভ ফুটবল খেলতে হবে।”
বিপ্লব আরও বলেন,
“বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ দেশের ফুটবলকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। জাতীয় স্টেডিয়ামে হামজা, ফাহামিদুল ও শমিত প্রথমবার মাঠে নামবেন, এই কারণেই অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। আমি মনে করি, এই ম্যাচ দেশের ফুটবল ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
কেন ফেবারিট বাংলাদেশ? মূল কারণগুলো সংক্ষেপে
- ঘরের মাঠে খেলা: জাতীয় স্টেডিয়ামের পরিচিত পরিবেশে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসী।
- সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স: ভারতের বিপক্ষে ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে ১ পয়েন্ট অর্জন।
- নতুন প্রবাসী ফুটবলারদের আগমন: হামজা, ফাহামিদুল ও শমিতের সংযুক্তি শক্তি বাড়িয়েছে।
- সিঙ্গাপুরের ছন্দহীনতা: অভিজ্ঞতা থাকলেও ফর্মে নেই দলটি।
- সমর্থকদের ব্যাপক সমর্থন: টিকিট বিক্রির গতি ও গ্যালারির উন্মাদনা নতুন রেকর্ড গড়তে পারে।
এগিয়ে যেতে হলে চাই ধৈর্য, পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ ফুটবল যেন এখন এক মোড় ঘুরানোর দুয়ারে দাঁড়িয়ে। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে জয় শুধু ৩ পয়েন্টই এনে দেবে না, এটি হবে ভবিষ্যতের একটি বড় বার্তা—বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তবে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমর্থন দরকার।