অর্থনীতি

টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রি পুনরায় শুরু: ভোক্তাদের স্বস্তি ফেরাতে উদ্যোগ

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এক মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর পুনরায় ট্রাকে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে টিসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

টিসিবির পণ্য বিক্রির নতুন পরিকল্পনা

নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করার জন্য এবার ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে টিসিবি। দীর্ঘ ১ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর এই কার্যক্রম পুনরায় চালু হচ্ছে।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা এবং ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন।

পণ্যের নির্ধারিত মূল্য হলো:

  • প্রতি লিটার ভোজ্যতেল: ১০০ টাকা
  • প্রতি কেজি মসুর ডাল: ৬০ টাকা
  • প্রতি কেজি চিনি: ৭০ টাকা
  • প্রতি কেজি ছোলা: ৬০ টাকা
  • প্রতি ৫০০ গ্রাম খেজুর: ১৫৫ টাকা

বিশেষ করে আসন্ন রমজান মাসের কথা মাথায় রেখেই ছোলা ও খেজুর বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে কার্যক্রম শুরু, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বিস্তৃতি

টিসিবির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আগামীকাল থেকে ঢাকার ৫০টি এবং চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও নির্দিষ্ট কিছু জেলায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রয় কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

যেকোনো ভোক্তা লাইনে দাঁড়িয়ে সরাসরি ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। তবে স্মার্ট কার্ডধারী ভোক্তাদের জন্য আলাদা সুবিধা থাকছে।

স্মার্ট কার্ডধারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা

টিসিবি জানিয়েছে, স্মার্ট কার্ডধারী ৫৭ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে নিয়মিত ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও ছয় লাখ স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এই স্মার্ট কার্ডধারীরা ভর্তুকি মূল্যে নির্দিষ্ট দোকান ও ট্রাক থেকে ভোজ্যতেল, ডালসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। তবে কার্ড নেই, এমন সাধারণ ভোক্তাদের জন্যও ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে।

পণ্য বিতরণ প্রক্রিয়া ও তদারকি

টিসিবির দায়িত্ব হলো আমদানি ও স্থানীয় ক্রয়ের মাধ্যমে পণ্য সংগ্রহ করা এবং ডিলারদের মাধ্যমে তা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তবে স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য উপকারভোগী নির্বাচন, তথ্য যাচাই, কার্ড বিতরণ, সচল রাখা এবং বিক্রয় কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত রয়েছে।

ভোক্তাদের তাদের কার্ডসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নিকটস্থ ওয়ার্ড কার্যালয় বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট

দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন।

২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে টিসিবি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছিল। তবে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের পর কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এবার স্বল্প বিরতির পর পুনরায় এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা টিসিবির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। বেশ কয়েকজন ভোক্তা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে টিসিবির মাধ্যমে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে পারলে তাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার এক ভোক্তা বলেন, ‘টিসিবির ট্রাক থেকে কেনার সুযোগ পেলে আমরা কিছুটা হলেও কম খরচে পণ্য কিনতে পারি। বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম, যা আমাদের জন্য উপকারি।’

চট্টগ্রামের এক গৃহিণী জানান, ‘রমজানের আগে টিসিবি যদি এই কার্যক্রম চালু রাখে, তাহলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক সহায়ক হবে।’

টিসিবির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

টিসিবি জানিয়েছে, আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য মজুত ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ভোক্তাদের সুবিধার জন্য নতুন নতুন স্থানে ট্রাক সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে স্মার্ট কার্ডের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে আরও বেশি পরিবার এই সুবিধার আওতায় আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সাধারণ মানুষকে সহায়তা দিতে সরকারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।

উপসংহার

টিসিবির এই উদ্যোগ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি বড় সহায়তা হতে পারে। তবে নিয়মিত নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা এর সুবিধা পেতে পারেন। টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রির পুনরায় শুরু হওয়া বাজারে স্বস্তি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button