বানিজ্য

বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের জন্য সৌদির ‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা’ স্থগিত

সৌদি আরব বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশের জন্য ‘ব্লক ওয়ার্ক ভিসা’ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে।

এই স্থগিতাদেশ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক বিদেশি কর্মী, চাকরিপ্রত্যাশী ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তারা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

কী এই ব্লক ওয়ার্ক ভিসা?

ব্লক ওয়ার্ক ভিসা হলো সৌদি নিয়োগকর্তাদের জন্য নির্ধারিত একটি পূর্ব-অনুমোদিত কর্মসংস্থান কোটা। সাধারণত সৌদি আরবে বিভিন্ন খাতে যেমন—নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতে শ্রমিক নিয়োগের জন্য নিয়োগদাতারা এই ভিসার আওতায় আবেদন করে থাকেন।

এই কোটা অনুমোদনের পর নিয়োগকর্তারা নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট পেশার শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদন করতে পারেন।

তবে এই কোটা-ভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি বর্তমানে ১৪টি দেশের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে পাকিস্তান, সুদান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চাদ, তাজিকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তান।

কেবল ব্লক ওয়ার্ক নয়, আরও কয়েকটি ভিসা স্থগিত

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ব্লক ওয়ার্ক ভিসার পাশাপাশি সৌদি সরকার আরও কিছু ভিসা বিভাগ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ওমরাহ ভিসা
  • বিজনেস ভিসা
  • পারিবারিক ভিজিট ভিসা
  • পার্সোনাল ভিজিট ভিসা

বিশেষত, হজ মৌসুম ঘনিয়ে আসায় প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ করতে এবং অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতেই সৌদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

হজ মৌসুমের প্রভাব

হজ একটি বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক মিলিয়ন মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। ফলে সৌদি আরবের প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হজ মৌসুমকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভিসা ইস্যু হলে দেশটির অবকাঠামো ও সেবা খাতে বাড়তি চাপ পড়তে পারে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই সৌদি সরকার ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে সীমিত করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন হাজারো বাংলাদেশি কর্মী

বাংলাদেশ প্রতি বছর সৌদি আরবে বিপুল সংখ্যক কর্মী পাঠিয়ে থাকে। ২০২৪ সালে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে গেছেন বলে সরকারি পরিসংখ্যান জানায়।

এই ভিসা স্থগিতাদেশের ফলে নতুন ভিসার জন্য অপেক্ষমাণ হাজার হাজার কর্মী এখন অস্থির সময় পার করছেন।

ঢাকার মালিবাগ এলাকার একজন রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তা জানান,

“আমাদের প্রায় এক হাজার কর্মীর মেডিকেল ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভিসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই স্থগিতাদেশে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”

এছাড়া, যারা ইতোমধ্যে টাকা পরিশোধ করে রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তাদের আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশের অবস্থান কী?

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,

“আমরা সৌদি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করছি। আশা করছি জুনের পরপরই আবার ভিসা চালু হবে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো লিখিত নোটিশ আসেনি।”ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব

এই ভিসা স্থগিতাদেশ শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বৃহৎ পরিসরে সৌদি আরবের অর্থনীতি ও অভিবাসন নির্ভর দেশগুলোর রেমিট্যান্স ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষ করে নির্মাণ ও সেবা খাতে যেসব সৌদি কোম্পানি দক্ষিণ এশিয়ার কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে,

এই স্থগিতাদেশ দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা জাতীয় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

সাময়িক স্থগিত, স্থায়ী নয়

বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি সাময়িক প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ভিসা কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোনো ঘোষণা এখন পর্যন্ত সৌদি সরকার দেয়নি।

এ ধরনের স্থগিতাদেশ হজ ও উমরাহ মৌসুমের আগেও দেখা গেছে। একাধিকবার ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত করে পরে আবার চালু করেছে সৌদি আরব।

তবে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর অভিবাসন মন্ত্রণালয় এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সতর্কভাবে এই সময় পার করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সারাংশ

সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে হলেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে চলেছে অভিবাসী কর্মীদের জীবনে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নে দিন গুনছেন, তাদের জন্য এটি এক ধরনের ধাক্কা।

তবে এখনই আতঙ্কিত না হয়ে, অপেক্ষা করতে হবে সৌদি সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত থাকায় আশা করা যায়, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button