বিশ্ব

বিমানবাহিনী প্রধানের ব্রিফিং কন্টিনজেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে নতুন একটি কন্টিনজেন্ট পাঠানো হচ্ছে। এই উপলক্ষে ১৭ জুন ২০২৫, সোমবার, ঢাকায় বিমানবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশেষ ব্রিফিং ও অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। তিনি মধ্য আফ্রিকাগামী কন্টিনজেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন এবং তাঁদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর গর্বিত অংশগ্রহণ

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের মিশনে অংশ নিচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর BANMUHU-6 কন্টিনজেন্টের নতুন দলটি যাচ্ছে ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে।

এই দলে রয়েছেন ১২৫ জন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সদস্য, যাঁরা মিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন তিনটি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার, নাইট ভিশন সক্ষমতা, ও অন্যান্য গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

প্রেরণামূলক ব্রিফিং ও মোনাজাত

ব্রিফিংয়ে বিমানবাহিনী প্রধান বলেন—

“আপনাদের পেশাগত নিষ্ঠা ও মানবিক আচরণই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরবে। আপনাদের প্রতি আমাদের দেশের প্রত্যাশা অনেক।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া শুধু দায়িত্ব নয়, এটি একটি সম্মান এবং গর্বের বিষয়। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আপনারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন।”

বক্তব্যের শেষে কন্টিনজেন্ট সদস্যদের মিশনের সাফল্য কামনায় আয়োজিত বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন বিমানবাহিনী প্রধান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:

  • বিমানবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার
  • ঢাকার দুটি বিমানঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক
  • বিমান সদর দপ্তর ও বিমানঘাঁটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
  • মিশনে নিযুক্ত BANMUHU-6 কন্টিনজেন্টের কমান্ডার এয়ার কমোডর ইমরানুর রহমান

মধ্য আফ্রিকায় বাংলাদেশ বাহিনীর ভূমিকা

মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। এই মিশনে বাংলাদেশের মতো একটি প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ দলের অংশগ্রহণ জাতিসংঘের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা সেখানে হেলিকপ্টার অপারেশন, মেডিকেল ইভাকুয়েশন, রসদ পরিবহন, টহল ও জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাঁদের কাজ কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, মানবিক সহায়তাও নিশ্চিত করা।

প্রযুক্তি ও প্রস্তুতি: BANMUHU-6-এর সক্ষমতা

BANMUHU-6 কন্টিনজেন্টে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

  • ৩টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার – সমরাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম
  • নাইট ভিশন টেকনোলজি – রাতেও অপারেশন চালাতে সক্ষম
  • গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট – রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, ও পরিবহন সহায়তা
  • যোগাযোগ ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম – পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও টিম ব্যবস্থাপনা

যাত্রার তারিখ ও পরিকল্পনা

BANMUHU-6 কন্টিনজেন্ট সদস্যরা ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র-এর উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
তাঁদের সঙ্গে থাকবে প্রয়োজনীয় কার্গো, সরঞ্জাম ও হেলিকপ্টার পার্টস, যা আগেই পণ্যবাহী বিমানে পাঠানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৫৪টির বেশি দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের অবদান আজ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। এই নতুন কন্টিনজেন্টের অংশগ্রহণ আরও একবার প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ কেবল শান্তিপ্রিয় দেশই নয়, বরং বৈশ্বিক শান্তি রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

মধ্য আফ্রিকায় শান্তির জন্য যাত্রা করা এই ১২৫ জন সদস্য হচ্ছেন বাংলাদেশের ‘নীল হেলমেট’ পরা শান্তির দূত। তাঁদের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুনরায় প্রমাণ করতে চলেছে— শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বমানবতার পাশে দাঁড়ানো আমাদের ঐতিহ্য এবং অঙ্গীকার।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button