বিশ্ব

ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ২

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও একধাপ বেড়ে গেল ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন-এ ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে। রবিবার সকালে এ হামলায় দুইজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। হামলার পরপরই বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট স্থগিত বা বিকল্প পথে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিমানবন্দরে হঠাৎ বিস্ফোরণ ও আতঙ্ক

আল জাজিরা ও টাইমস অব ইসরায়েল-এর খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকালবেলায় ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে সাইরেন বেজে ওঠে। দ্রুত জানা যায়, একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেলআবিবের অদূরে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় বিস্ফোরিত হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের পাশে আকাশে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে, যা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা তুলে ধরে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, এই হামলায় ব্যবহার করা ক্ষেপণাস্ত্রটি তারা প্রতিহত করতে পারেনি। ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবন্দর এলাকায় আঘাত হানার পরই একাধিক বিস্ফোরণ ঘটে, যার প্রভাবে দুইজন সেনা নিহত হন এবং কয়েকজন আহত হন।

হুতিদের দিকে সন্দেহ, তবে এখনো দায় স্বীকার করেনি কেউ

ইসরায়েল দাবি করেছে, এই হামলার পেছনে রয়েছে ইয়েমেনের হুথি সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা সম্প্রতি ইসরায়েলবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত হুতি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

তবে পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা হুতিদের পক্ষ থেকেই চালানো হয়েছে। ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েল-গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিকবার ইসরায়েলের দিকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

বিমান চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের হয়রানি

হামলার পরপরই ইসরায়েলের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAA) বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর থেকে সকল ফ্লাইট স্থগিত করে। আকাশপথে থাকা ফ্লাইটগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র পাঠানো হয় এবং যাত্রীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনেক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক এয়ারপোর্টে জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। বিমানবন্দর এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।

আঞ্চলিক যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংঘাতকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ এখন আরও বিস্তৃত আকার নিচ্ছে এবং ইয়েমেনসহ অন্যান্য অংশীদার গোষ্ঠীগুলো সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সায়মন রেজ বলেন, “বেন গুরিয়নের মতো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা শুধু সামরিক পরিকাঠামো নয়, বরং প্রতীকী দিক থেকেও ইসরায়েলের জন্য বড় আঘাত। এটা ইসরায়েলকে কৌশলগত ও কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলবে।”

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত চলমান

আইডিএফ মুখপাত্র জানিয়েছেন, বর্তমানে ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযান চালানো হচ্ছে। বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মহলকে জানানো হবে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করছি এবং আগামী দিনগুলোতে আরও হামলার প্রস্তুতির আশঙ্কা রয়েছে।”

ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

হামলার ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আবারও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ফিরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে ইরান সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হুতিদের হামলার নেপথ্যে যদি ইরানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা থাকে, তবে এই পরিস্থিতি আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।

সংঘাত কি ছড়িয়ে পড়ছে?

ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে এই হামলা শুধু সামরিক নয়, বরং কৌশলগত, কূটনৈতিক এবং প্রতীকী দিক দিয়েও এক ভয়াবহ ঘটনা। এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

যদি হুতিরা সত্যিই এই হামলার পেছনে থাকে, তবে ইয়েমেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সরাসরি আগ্রাসন শুরু হলো, যার প্রভাব পড়বে ইরান, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো অঞ্চলে। এখন দেখার বিষয়—ইসরায়েল এর প্রতিক্রিয়ায় কী পদক্ষেপ নেয় এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এই উত্তেজনা প্রশমনে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button