
ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুককে দুই বছরের জন্য ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে নিষিদ্ধ করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সম্প্রতি বিসিসিআই বিষয়টি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা অবশ্য অনুমিতই ছিল। গত রোববার ২৬ বছর বয়সী ব্রুক ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এবারের আইপিএল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। কিন্তু বিসিসিআই মনে করছে, ব্রুকের এই সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি এবং আইপিএলের প্রতি খেলোয়াড়দের দায়িত্বের অভাব নির্দেশ করে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার কারণ ও প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের আইপিএল নিলামে ব্রুককে ৬.২৫ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। এর আগের বছরও একই ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে ৪ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছিল, কিন্তু তিনি খেলেননি। প্রথমবার তিনি দাদির মৃত্যুর কারণে টুর্নামেন্টে অংশ নেননি বলে জানিয়েছিলেন। এবার তাঁর সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জাতীয় দলের ব্যস্ততার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিসিসিআই মনে করছে, কোনো খেলোয়াড় নিলামের সময় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দলে যোগ না দিলে সেটি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য বড় আর্থিক ক্ষতি এবং টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্যই ২০২৫ সাল থেকে বিসিসিআই কঠোর নীতি গ্রহণ করছে, যেখানে উপযুক্ত কারণ ছাড়া কোনো বিদেশি খেলোয়াড় আইপিএল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করলে তাঁকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। ব্রুকের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রয়োগ করেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ব্রুকের প্রতিক্রিয়া ও ইসিবির অবস্থান
এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত হ্যারি ব্রুক বা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইসিবি বরাবরই আইপিএল নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এবং নিজেদের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহিত করে থাকে। কিন্তু ব্রুকের নিষেধাজ্ঞা ইসিবির ভবিষ্যৎ কৌশলে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ইংল্যান্ডের অন্য খেলোয়াড়রা আইপিএল খেলতে গেলে তাঁরা এই নতুন কঠোর নিয়মের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হতে পারে।
আইপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতির প্রভাব
হ্যারি ব্রুকের ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ইংল্যান্ডের জেসন রয়, মার্ক উড এবং অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পাও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আইপিএলে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয় এবং দলগুলোর পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটায়।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিসিসিআই এবার আরও কঠোর হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই নতুন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতির আওতায় কোনো বিদেশি খেলোয়াড় যদি বিনা উপযুক্ত কারণ আইপিএলে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে তাঁকে পরবর্তী দুই মৌসুমের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে।
আইপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়দের গুরুত্ব
বিদেশি খেলোয়াড়রা দীর্ঘদিন ধরেই আইপিএলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তাঁদের উপস্থিতি শুধু প্রতিযোগিতার মান বাড়ায় না, বরং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বিপণন ও ব্র্যান্ডমূল্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বড় তারকা ক্রিকেটারদের চুক্তিবদ্ধ করা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য বিশাল বিনিয়োগের অংশ। কিন্তু তাঁরা যদি শেষ মুহূর্তে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন, তাহলে সেই বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কঠোর নীতি আইপিএল দলগুলোর জন্য ইতিবাচক হবে। কারণ এতে করে খেলোয়াড়দের দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিরা আগেভাগেই নিশ্চিত হতে পারবে যে তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্ত খেলোয়াড়রা টুর্নামেন্টে অংশ নেবে।
২০২৫ আইপিএলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা
বিসিসিআইয়ের এই নতুন নীতির কারণে ২০২৫ সালের আইপিএল থেকে খেলোয়াড়দের দলভুক্ত করার ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কৌশল বদলাতে হতে পারে। তাঁরা হয়তো এখন আরও নিশ্চিত হতে চাইবে যে যে খেলোয়াড়দের নিলামে নেওয়া হবে, তাঁরা পুরো টুর্নামেন্ট খেলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়া, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা হয়তো এমন খেলোয়াড়দের ওপর বেশি জোর দেবে, যাঁরা আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কারণে আইপিএলকে উপেক্ষা করবেন না। এতে করে ভবিষ্যতে আইপিএলে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
উপসংহার
হ্যারি ব্রুকের দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা আইপিএলে কঠোর নিয়ম প্রয়োগের শুরু মাত্র। ভবিষ্যতে এই নীতি আরও কঠোর হতে পারে, যাতে খেলোয়াড়রা দায়িত্বহীনভাবে চুক্তিভঙ্গ না করেন। বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত আইপিএলকে আরও সুসংগঠিত করতে সাহায্য করবে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখবে।
এই নীতি কার্যকর হওয়ার পর দেখা যাবে, ভবিষ্যতে বিদেশি খেলোয়াড়রা আইপিএলের প্রতি আরও দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণ করেন কি না। তবে এটি স্পষ্ট যে, আইপিএল বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রতিযোগিতামূলক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হওয়ায় বিসিসিআই এই লিগের গুণগত মান বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না।