গড়ে প্রতিদিন ৪ লাখ যাত্রী মেট্রোতে, মিরপুর-১০-এ সবচেয়ে বেশি ভিড়

ঢাকার ব্যস্ত জনজীবনে দ্রুততম যাতায়াতের মাধ্যম হয়ে উঠেছে মেট্রোরেল। গড়ে প্রতিদিন চার লাখ যাত্রী এই সেবায় ভরসা রাখছেন। কোন স্টেশনগুলোতে যাত্রী চাপ সবচেয়ে বেশি, আর কোন স্টেশন তুলনামূলক কম ব্যস্ত—সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের যাত্রীচিত্রে মিলছে নতুন বাস্তবতা।
কোন স্টেশনে কত যাত্রী?
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (DMTCL)-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী উঠানামা করেন। মেট্রোরেল চালুর পর এ পর্যন্ত এখান থেকে এক কোটিরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করেছেন।
অন্যদিকে, উত্তরা উত্তর, মতিঝিল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার ও সচিবালয় স্টেশনও যাত্রীর সংখ্যায় এক কোটির গণ্ডি ছুঁয়েছে। তবে উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন তুলনামূলক কম যাত্রীপ্রবাহের তালিকায় রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন থেকে দৈনিক গড়ে মাত্র দুই হাজারের মতো যাত্রী যাতায়াত করেন।
কখন চালু হলো মেট্রো রেল?
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম চালু হয় বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল। শুরুতে সীমিত স্টেশন চালু থাকলেও, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পুরো লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) চালু হয় যাত্রীদের জন্য। বর্তমানে পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে ১৪টি ট্রেন, যেগুলো পিক আওয়ারে ৮ মিনিট ও অফপিক সময়ে ১০ মিনিট অন্তর চলাচল করে।
শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটিতে রয়েছে পরিবর্তিত সময়সূচি। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় ট্রেন চলাচল, আর অন্য ছুটির দিনে পিক আওয়ারে ৮ মিনিট ও অফপিকে ১২ মিনিট পরপর ট্রেন পাওয়া যায়।
কোন মাসে সবচেয়ে বেশি যাত্রী?
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বাধিক যাত্রী চলাচল হয়েছে মেট্রোরেলে। এক মাসেই প্রায় এক কোটি ২০ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে।
এর মূল কারণ ছিল ঐ সময়ে চলা বইমেলা ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট তীব্র যানজট। ফলে শহরের অনেক মানুষ ব্যক্তিগত যানবাহনের পরিবর্তে মেট্রোরেলকেই বেছে নেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ২৭ ফেব্রুয়ারি ছিল যাত্রীসংখ্যার রেকর্ড দিন — ওই দিনে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৮১ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়।
মানুষের যাতায়াতে মেট্রোরেল কতটা বদল এনেছে?
অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ মেট্রোরেলের উপর দিন দিন নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। তারা বলছেন, “মেট্রোরেল আমাদের সময় বাঁচায়, যানজট থেকে মুক্তি দেয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের পরিবহন খাতে এটি এক গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে। কর্মক্ষমতা ও সুশৃঙ্খল ট্রেন টাইমিংয়ের কারণে মেট্রোরেল দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কোন দিকগুলোতে উন্নয়ন দরকার?
যদিও যাত্রী সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবু কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যাচ্ছে।
নির্দিষ্ট কিছু স্টেশনে যাত্রী ধারণক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত ভিড়
ফিডার বাস সার্ভিসের সীমাবদ্ধতা
টিকিট কাটার লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন ডিজিটাল টিকিটিং, আরও বেশি ফিডার রুট, এবং স্টেশন ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার।
“মেট্রোরেল আমাদের সময় এবং মানসিক চাপ দুটোই কমিয়ে দিয়েছে”—মিরপুর-১০ স্টেশনের এক যাত্রী
সারসংক্ষেপ
রাজধানীবাসীর যাতায়াতের ধারা বদলে দিয়েছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই আধুনিক গণপরিবহন এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ লাখ যাত্রী পরিবহন করছে। অফিস টাইমে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে এই রেলপথে। তবে কিছু স্টেশন যাত্রীর চাপের বিচারে শীর্ষে, আবার কিছু তুলনামূলকভাবে ফাঁকা।
মেট্রোরেলের যাত্রীসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, এবং এর সফলতা রাজধানীকে আধুনিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থার পথে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে যাত্রী চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও যাত্রীসেবার মান বজায় রাখাও জরুরি হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতে আরও নতুন রুট ও সেবা যুক্ত হলে, রাজধানীবাসীর জন্য এটি হয়ে উঠবে এক অনন্য সমাধান। প্রশ্ন রয়ে যায়, সেই প্রসারতা কত দ্রুত বাস্তবে পরিণত হবে?
এম আর এম – ০২৪০, Signalbd.com