বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি, ২ জনের মৃত্যু

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৫ জন রোগী, যা চলতি বছরের একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা। একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুইজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

একদিনে রোগী ভর্তির পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সর্বাধিক ঢাকায়।

  • ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন
  • ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভর্তি হয়েছেন ১৩০ জন
  • ঢাকা বিভাগের বাইরে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১৪ জন

অন্য বিভাগগুলোর অবস্থাও উদ্বেগজনক।

  • চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১২ জন
  • বরিশাল বিভাগে ৯৬ জন
  • রাজশাহী বিভাগে ৩৭ জন
  • খুলনা বিভাগে ১৭ জন
  • ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫ জন
  • রংপুর বিভাগে ১৪ জন
  • সিলেট বিভাগে ৩ জন

এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ৩৬ হাজার ৯৬ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও সুস্থতার চিত্র

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯ জনে।
অন্যদিকে, একই সময়ে ৬০৪ জন রোগী হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ বছর এ পর্যন্ত মোট ৩৪ হাজার ১৩৬ জন রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।

পূর্ববর্তী বছরের সঙ্গে তুলনা

গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও চলতি বছর সেটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতও এডিস মশার বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যে গতিতে বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে স্বাস্থ্যখাতের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হবে।
একজন বিশেষজ্ঞ জানান, “শুধু হাসপাতাল বাড়ালেই হবে না; মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে না পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”
তাদের মতে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গুরুতর জটিলতা দেখা দিচ্ছে এবং প্লেটলেট কমে যাওয়ার কারণে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

নগরবাসীর ভোগান্তি

ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি নগর এলাকায়। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ায় অনেককে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেকে আবার বেসরকারি হাসপাতালে বেশি খরচে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন, সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে না। এ কারণে ঘরে-বাইরে দু’ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কয়েকটি বিষয় কঠোরভাবে মানা প্রয়োজন:

  1. বাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানি সরানো
  2. ফুলের টব, ড্রেন, খোলা পাত্র ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে
  3. সকাল ও বিকেলে মশারি ব্যবহার
  4. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিটনাশক স্প্রে করা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনগণকে সচেতন হতে অনুরোধ করেছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন জাতীয় উদ্বেগের পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী ভর্তির সংখ্যা এবং মৃত্যুর খবরও কমছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণও জরুরি।

এম আর এম – ১২৭০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button