ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ত্যাগ করবে না ইরান, ফের হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

মার্কিন বিমান হামলায় বড় ধরনের ক্ষতি স্বীকার করলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে সরে আসবে না বলে জানাল ইরান। তাদের মতে, এটি দেশের জাতীয় গর্বের প্রতীক। অন্যদিকে, এই অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ নয়: ইরানের স্পষ্ট বার্তা
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক সাক্ষাৎকারে জানান, “এই প্রযুক্তি আমাদের নিজস্ব। এটা আমাদের বিজ্ঞানীদের অর্জন, যা আমরা কোনো অবস্থাতেই ত্যাগ করতে পারি না।”
আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা সামরিক আগ্রাসনের মুখেও ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির দাবি, এই প্রকল্প কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
হামলায় ক্ষতি, তবুও কর্মসূচি চলবে
গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত বিমান হামলায় ইরানের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ভূগর্ভস্থ ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। আরাগচি বলেন, “আমাদের অবকাঠামোর কিছু ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রযুক্তি বা সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি।”
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এখনো ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে। তবে কতটা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রক্ষা করা গেছে সে বিষয়ে তারা নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি।
ট্রাম্পের ফের হামলার হুঁশিয়ারি
ইরানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবারও সামরিক হামলা চালানো হবে।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, “আমি যা বলেছিলাম, তা-ই করেছি। আবারও করতে পিছপা হব না।” এছাড়াও, তিনি সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যেখানে বলা হয়েছিল, হামলার ফলে ইরানের কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য স্থগিত হয়েছে।
অতীত প্রেক্ষাপট: পারমাণবিক চুক্তি ও বিরোধ
২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) অনুযায়ী, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সীমিত রাখবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখবে বলে সম্মত হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে এসে ইরানের ওপর পুনরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এর জেরে ইরান ধাপে ধাপে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকে। বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
প্রতিরোধে প্রস্তুত ইরান
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরাগচি জানান, মার্কিন ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের হাতে এখনো প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। প্রয়োজনে প্রতিঘাতের জন্যও প্রস্তুত।”
এছাড়া তিনি জানান, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও প্রতিরক্ষা অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ইরান কোনও রকম চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আলোচনায় আগ্রহ, তবে শর্তসাপেক্ষে
আরাগচি বলেন, “আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রস্তাব পেলে অবশ্যই আলোচনায় বসব। তবে আমাদের কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।”
ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) নিয়ম মেনে কার্যক্রম চালানোর আগ্রহও প্রকাশ করেছে, যদিও পশ্চিমা বিশ্বের আস্থা অর্জন করতে হলে তাদের আরও স্বচ্ছতা দেখাতে হবে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের এই পারমাণবিক উত্তেজনা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং চীন ইতিমধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
তবে যদি উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সারসংক্ষেপ
ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তেজনা ফের চরমে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও ইরানের দৃঢ় অবস্থানের কারণে অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত সংবেদনশীল। আলোচনার টেবিলে না ফিরলে উত্তেজনা যে আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এম আর এম – ০৪৮২ , Signalbd.com