১০ ও ১১ মে সিটি ব্যাংকের সব সেবা বন্ধ থাকবে

আগামী ১০ ও ১১ মে তারিখে সিটি ব্যাংকের সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। ডেটা সেন্টার স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংকটি এই সময়সূচিতে লেনদেন ও গ্রাহকসেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতির ভিত্তিতে ৯ মে রাত ১২টা থেকে ১১ মে রাত ৮টা পর্যন্ত এই সময়সীমায় ব্যাংকটির কোনো অনলাইন বা অফলাইন সেবা চালু থাকবে না।
ডেটা সেন্টার স্থানান্তর: প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রয়াস
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “ডেটা সেন্টার স্থানান্তরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সিটি ব্যাংককে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুমোদন দেওয়া হলো।”
এই পদক্ষেপটি ব্যাংকের প্রযুক্তিগত কাঠামো আরও শক্তিশালী ও নিরাপদ করতে নেওয়া হয়েছে। উন্নত ও আপগ্রেডকৃত ডেটা সেন্টার ব্যাংকের গ্রাহকদের ভবিষ্যতে আরও দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে বলে মনে করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের সেবা বন্ধ থাকবে?
নির্ধারিত সময়কালে সিটি ব্যাংকের নিম্নোক্ত সেবাগুলো বন্ধ থাকবে:
- সব ধরনের অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং (Citytouch, App-based সেবা)
- এটিএম, পিওএস ও ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন
- মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং
- ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ ও তথ্য হালনাগাদ
- শাখা ভিত্তিক সরাসরি লেনদেন ও সেবাপ্রদান
- কল সেন্টার ও গ্রাহক সহায়তা লাইন
গ্রাহকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় লেনদেন পূর্বেই সম্পন্ন করে নেওয়ার জন্য, যাতে ৯ মে রাতের পর থেকে ১১ মে রাত পর্যন্ত কোনো জরুরি প্রয়োজনীয়তায় ভোগান্তির শিকার না হন।
সিটি ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক অবস্থা ও গ্রাহকভিত্তি
১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা সিটি ব্যাংক বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক। ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩২ লাখ। ২০০৭ সালে এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৬৮ হাজার। এই বিশাল গ্রাহকভিত্তির পেছনে ব্যাংকটির প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সেবা এবং দ্রুতগতির কার্ড সেবা অন্যতম কারণ।
বর্তমানে সিটি ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন ৫ হাজার ৩২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক রয়েছে এই ব্যাংকের, যা ব্যাংকটির শক্তিশালী রিটেইল ব্যাংকিং কাঠামোর প্রমাণ।
ক্রেডিট কার্ডের আওতায় ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা এবং ঋণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।
মুনাফায় বড় সাফল্য: এক বছরে ৫৯% প্রবৃদ্ধি
২০২৪ সালের শেষে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা সমন্বিত মুনাফা অর্জন করেছে, যা আগের বছরের (২০২৩) তুলনায় ৫৯% বেশি। ২০২৩ সালে সমন্বিত মুনাফা ছিল ৬৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে ৩৭৬ কোটি টাকা।
এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংকটির পরিচালন দক্ষতা, প্রযুক্তিনির্ভর গ্রাহকসেবা এবং করপোরেট ও রিটেইল ব্যাংকিংয়ের সুষম সমন্বয়ের ফল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফুটনোট: সতর্কতা ও প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান
ডেটা সেন্টার স্থানান্তর একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া। এই সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের বিকল্প আর্থিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্ধারিত সময় শেষে স্বাভাবিক সেবা পুনরায় চালু করা হবে এবং যেকোনো ভোগান্তি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।