হবিগঞ্জের সাবেক ডিসি-এডিসি ও দুই এসিল্যান্ডের কারাদণ্ড

হবিগঞ্জের চৌধুরী বাজার এলাকায় আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ঘটনায় সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও দুই এসিল্যান্ডকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
রোববার (২৭ জুলাই) হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ তারেক আজিজ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
২০০৭ সালের উচ্ছেদ অভিযানের ঘটনায় মামলা
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াইমুখ এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। ওই জমি নিয়ে আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ থাকার পরও অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় স্থানীয় আব্দুল হামিদের ঘর ভেঙে ফেলা হয় এবং তার দখলে থাকা জমি বেদখল করা হয়।
ঘটনার এক বছর পর ২০০৮ সালের ১০ আগস্ট ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আব্দুল হামিদ বাদী হয়ে হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) একেএম আমিনুল ইসলাম, বানিয়াচং উপজেলার তৎকালীন ইউএনও ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুরে আলম সিদ্দিকী এবং সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সফিউল আলমসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রায়
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর অবশেষে ১৭ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। আদালত রায়ে চার সরকারি কর্মকর্তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন এবং একই সঙ্গে বাদির জমি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে জমি বুঝিয়ে দিতে ও প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ে আদালতের মন্তব্য
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রশাসন কখনো আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময়ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা বাধ্যতামূলক। এই মামলার ঘটনায় আইনের শাসন উপেক্ষিত হয়েছে এবং একজন সাধারণ নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা দেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক।
বাদির প্রতিক্রিয়া
রায় ঘোষণার পর বাদি আব্দুল হামিদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমি ১৭ বছর ধরে ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছি। আজ আদালতের রায়ে আমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার হলো। আশা করি এখন আমি আমার জমি ফিরে পাব।”
হবিগঞ্জে আলোচনা-সমালোচনা
রায় ঘোষণার পর হবিগঞ্জ শহরজুড়ে এই ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই রায় প্রমাণ করেছে যে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে যে কেউ আইনের আওতায় আসতে বাধ্য।
আইনজীবীরা মনে করছেন, এই রায় সরকারি প্রশাসনের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা হিসেবে কাজ করবে। তারা বলছেন, ভবিষ্যতে কোনো অভিযানে যাওয়ার আগে কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক হতে হবে এবং আদালতের আদেশ মান্য করতে হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
রায় কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অন্যদিকে, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগও রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আপিল করা হবে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।
ভবিষ্যতে এর প্রভাব
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের রায় ভবিষ্যতে সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করবে। নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের এই অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তারা আরও বলছেন, আদালতের আদেশ অমান্য করলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দায়ী হবেন—এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।
সারসংক্ষেপ
১৭ বছর পুরোনো একটি ঘটনার রায়ে চার সরকারি কর্মকর্তার কারাদণ্ডের ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক মহলে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন সবার নজর থাকবে রায় কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ার দিকে এবং আপিলের সিদ্ধান্তের দিকে। তবে এ ঘটনা দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
এম আর এম – ০৫৫১, Signalbd.com