অর্থনীতি

শুল্ক ইস্যুতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বসছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আগামীকাল বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ বাণিজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের পরিমাণ পুনর্বিবেচনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করা।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিবও এই বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আজই ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে রওনা হবেন। বৈঠকে দেশের রফতানি পণ্যের ওপর শুল্ক ও ট্যারিফ নির্ধারণ সংক্রান্ত সকল আপডেট তুলে ধরা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আলোচনা হবে।

শুল্ক নির্ধারণে বৈষম্য: বাংলাদেশ বনাম ভিয়েতনাম

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি তুলনামূলকভাবে ভিন্ন মাত্রার হলেও বাংলাদেশে শুল্কের হার ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি। অথচ ভিয়েতনামের ওপর মার্কিন ট্যারিফ অনেক কম। এটা এক ধরনের বৈষম্য, যা আমাদের জন্য ন্যায্য নয়।”

ড. সালেহউদ্দিন আরো বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চাই যে, বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলে আমাদের রফতানি খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বাণিজ্য ঘাটতির সমস্যা আরও বাড়বে।”

মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব

অর্থ উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশ কমেছে এবং তিনি আশাবাদী, আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। মূল্যস্ফীতির এই উন্নতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত এবং এটি রফতানি খাতের জন্যও সুখবর বয়ে আনবে।

শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও মার্কিন নীতি

বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটনে বৈঠকে মার্কিন কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিবেন যে, বাংলাদেশের শুল্ক নীতি পরিবর্তন না হলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক প্রভাবিত হবে। বিশেষ করে পোশাক ও তৈরি পোশাক খাত, যা দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাজার হওয়ায়, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা এই বাজারে প্রবেশে সবসময়ই মনোযোগী। তাই এখানে শুল্ক বাড়ানো হলে, বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ক্ষুণ্ন হবে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নে সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও শুল্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন বাধা তা ব্যাহত করছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশা প্রকাশ করেছেন, বৈঠকের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশকে ন্যায্য সুযোগ দেয়ার জন্য শুল্ক হার কমাবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত ও বিশ্লেষণ

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে শুল্ক বাড়ানো হলে স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হবে। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও শুল্ক কমানোর মাধ্যমে দেশের রফতানিখাতের উন্নয়ন সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশের ওপর শুল্ক বেশি হওয়া একটি বড় অসঙ্গতি, যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। নাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

আগামী দিনের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বাণিজ্য সচিব মিলিতভাবে বৈঠকের ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট করবেন। আশা করা হচ্ছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের যুক্তি বিবেচনা করবে এবং শুল্ক নির্ধারণের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনে এ ধরনের উচ্চস্তরের বৈঠক বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এই উদ্যোগ দেশের অর্থনীতি ও রফতানিখাতের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button