অর্থনীতি

নতুন উন্নয়নবাণিজ্যে বড় ঘুষের চাপ, ১ লাখ থেকে বেড়ে ৫ লাখ টাকা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের ব্যবসায় এখন ঘুষের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। যেখানে আগে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ নিতে হতো, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকায়। গতকাল তিনি এক বড় ব্যবসায়ী থেকে এই তথ্য পেয়েছেন বলে জানান।

এই মন্তব্য করেছেন তিনি আজ ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অর্থনীতিবিদ ও সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ঘুষ ও দুর্নীতির ভয়াবহতা, আর কোনো উন্নয়ন সম্ভব না

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে এখন কোনো ধরনের সুশাসন নেই, পুরো ব্যবস্থাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পুলিশ প্রশাসনসহ সব জায়গায় সংস্কারের অভাব স্পষ্ট। তবে রাতারাতি সংস্কার সম্ভব নয়, সময় লাগবে। তাই বসে থাকা নয়, দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা জরুরি।” তিনি বলেন, “গণতন্ত্র ছাড়া চাপিয়ে দেওয়া কোনো সংস্কার সফল হবে না। জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে সংসদে, যারা আসলে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে দেশের ব্যবসা বড় চাপে পড়তে পারে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।”

সুশাসনহীনতায় লুকিয়ে রয়েছে বিপদ

অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। আইনের অবনতি ও প্রক্রিয়ার ধ্বংস হয়েছে। মানুষগুলো এখনও পুরোনো মনোভাব নিয়েই কাজ করছে। অনেকেই সবকিছু বাদ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে চান, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তাই মৃদু ধমকি দিয়ে কাজ করানো ছাড়া উপায় নেই।”

তিনি বলেন, “সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন। ক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ না থাকায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে অসংশোধিত থেকে যান। রাজনৈতিক দলগুলোতেও সংস্কার প্রয়োজন, তা ছাড়া দেশের উন্নয়ন স্থবির থাকবে।”

অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: বইয়ে তুলে ধরা বাস্তবতা

হোসেন জিল্লুর রহমানের ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা’ বইটিতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন কিভাবে প্রশাসনিক দুর্বলতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।

বইটির মূল বক্তব্য হলো — অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন একই সঙ্গে চলতে হবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প, অর্থনৈতিক নীতি ও রাজনৈতিক শাসনের মধ্যে সমন্বয় ছাড়া দেশের প্রগতি সম্ভব নয়।

দুর্নীতি বেড়েছে, সুশাসন সংকটে

বিশ্লেষকদের মতে, ঘুষের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসায় অবনতি ঘটাচ্ছে। বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নানা রকম অবৈধ চাপের মুখে পড়ছেন, যা নতুন উদ্যোগ শুরু করা বা ব্যবসা চালানোকে কঠিন করে তুলছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে কাঙ্খিত পরিবর্তন না আসায় সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থায় উন্নয়ন ও শাসনের মানোন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক সংকট দূর করা প্রয়োজন।

গণতন্ত্রই পারে আনতে পরিবর্তন

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দেশের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই একমাত্র পথ। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে সংস্কার আনার পাশাপাশি জনগণের মতামত ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button